আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম হয়তো এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। নেইমার, থিয়াগো সিলভা, মার্কুইনহোস, রিচার্লিসন, রদ্রিগো, পাকুয়েতাদের চোখের পানিতে স্টেডিয়ামটির সবুজ গালিচা ভাসবে, তা হয়তো ভাবতেও পারেনি কেউ।
কিন্তু, বাস্তবতাকে তো আর কেউ এড়াতে পারবে না। টাইব্রেকার নামক ভাগ্যের খেলায় হেরে যেতে হলো। দুটি শট মিস করলো ব্রাজিল। আর এ একটি জায়গায় নিজেদের সেরা প্রমাণ করে এখনও পর্যন্ত দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে ক্রোয়েশিয়া।
মার্কুইনহোসের শটটি নেয়ার আগেই ক্যামেরার চোখ ঘুরে এসেছিলো নেইমারের ওপর দিয়ে। তখনই বোঝা গিয়েছিলো, বিশ্বের অন্যতম সেরা এই তারকার মনে হয়তো জানা হয়ে গেছে, তারা বিদায় নিচ্ছেন। চোখ ছলছল করছিলো তখনই। মার্কুইনহোস শটটি সাইডবারে লাগাতেই অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে বসে পড়লেন নেইমার।
তখনই তার চোখ বেয়ে অজোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। দানি আলভেজসহ সাইড বেঞ্চে বসা ফুটবলার এবং কর্মকর্তারা এসে নেইমারকে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উথলে ওঠা আবেগের কান্না কী রোদ করা সম্ভব? চোখের পানিকেও বা কী জবাব দিয়ে আটকে রাখবেন তিনি!
পুরো ম্যাচে শিষাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ডিফেন্স তৈরি করে রেখেছিলো ক্রোয়েশিয়া। গোলমুখে গিয়ে একটি শট নিতে পর্যন্ত পারছিলো না। মাঝ মাঠের খেলাকে নষ্ট করে দিচ্ছিলো বারবার। তবুও অসংখ্য আক্রমণ এবং গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন নেইমার এবং ব্রাজিল। কিন্তু কোনোটিই কাজে লাগেনি। সর্বশেষ গোলরক্ষক লিভানোভিকের কাছে গিয়ে ফিরে এসেছে।
সে জায়গায় নেইমার প্রায় একক প্রচেষ্টায় যে গোলটি করলেন, তা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন সবাই। কিন্তু ডিফেন্ডাররা সেই গোলটিকে ডিফেন্ড করতে পারলেন না। গোল হজম করে বসলেন। টাইব্রেকার নামক ভাগ্যের খেলায় তো যে কেউ হেরে যেতে পারে। তবুও, শট নেয়ার ক্ষেত্রেও বা কেন আরও যত্নশীল হবে না রদ্রিগো-মার্কুইনহোসরা? শেষ শটটি নেয়ার কথা ছিলো নেইমারের। সে পর্যন্ত আর যাওয়াই লাগলো না। হেরে গেলো ব্রাজিল।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল স্পষ্ট ফেবারিট এবং ইউরোপিয়ান এই দেশটির বিপক্ষে সহজেই জিতে সেমিফাইনালে পা রাখবে সেলেসাওরা- এটাই ধরে নিয়েছিলো সবাই।
ক্রোয়েশিয়াও হয়তো এতটা ভাবেনি। যদিও তারা কৌশল নিয়েছিলো মাঝমাঠে ব্রাজিলের ছন্দময় খেলা নষ্ট করার এবং যেভাবেই হোক ডিফেন্স শক্তিশালী রাখার। সে চেষ্টায় তারা সফল। গোল করতে দেয়নি ব্রাজিলকে। ২১টি শট নিয়েও এক নেইমারছাড়া আর কোনোটিই ক্রোয়েশিয়ার জালে প্রবেশ করাতে পারেনি।
এমন অসাধারণ ফুটবল খেলার পর বিদায় নেয়াটা যে কারো জন্যে কষ্টের। নেইমারের কষ্টটা আরো বেশি। কারণ, তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। ভেবেছিলেন, শেষ বিশ্বকাপটা রাঙ্গিয়ে নেবেন ট্রফি জিতে। ব্রাজিলকে জেতাবে হেক্সা বিশ্বকাপ। কিন্তু কোনোটিই হলো না।
Jag/N