মোঃ আব্দুল মান্নান
ফাল্গুনের প্রথম দিনটি বসন্তকাল হিসেবে শুরু হয়। হাঁড় কাঁপানো শীতের শেষে যখন প্রথম বসন্তের ছোঁয়া লাগে তখন ধরে নেয়া হয় সেটি ভালবাসার প্রতীক। তাই বাঙ্গালী জাতি বসন্তের সেই দিনটিকে বসন্তের সময় ও দিন হিসেবেই ঘোষণায় রেখেছে। এ দিনটি হলো ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আবার ঐ দিনটিই সারা পৃথিবীতে ভালবাসা দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। আর আমরা বাঙ্গালীরা তো একটু অহংকার করবোই, কেননা ঐ দিনটি আমাদের বসন্তের প্রথম দিন এবং ঋতুরাজের প্রথম দিন। এতসব যখন ঐ দিনে হয় তখন আমরা বাঙ্গালী জাতি গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিব যে- দিনটি শুধু ভালবাসা দিবস না, দিনটি বাঙ্গালী জাতির বসন্তকালের প্রথম দিন, এ দিনটিই আমাদের উৎসবের দিন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস হলো একটি বিদেশি সংস্কৃতি। এরপরও কারো কারো মনে দ্বিধাদন্দ থেকেই যায়। বিদেশি সংস্কৃতির একটা দিবসকে আমদানী করে আমরা আমদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভারাক্রান্ত করে ফেলছি কিনা?
আমাদের সংস্কৃতির রয়েছে নিজস্ব ভাণ্ডার। স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াতে তাই আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনেও রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক সংগ্রাম হাতে হাত ধরে অগ্রসর হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, “যারা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেবা করছে, তাদেরকে দেশের জনগণের সাথে গভীর যোগসূত্র রক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে। সংস্কৃতি ও শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে দেশের মানুষের কল্যাণে।”
জীবনের পরিবর্তনের মাঝেও একটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে হয়, তা হলো মানুষের আত্মপরিচয়। আর সংস্কৃতি হলো আত্মপরিচয়ের মাপকাঠি। আমরা উন্নত সমাজ চাই, চাই একটি উন্নত বাংলাদেশ। এ লক্ষ্য অর্জনে দেশজ সংস্কৃতির চর্চার কোন বিকল্প নেই। নিজের সমাজকে, দেশকে, দেশের ভূ-খণ্ডকে ভালবাসলে আপন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে চ্যুত হতে দেয়া ঠিক নয়। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ সমাজ পরিবর্তনের চিরায়ত শক্তি ও জাতির উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। যে জাতি ও সমাজ শিল্প এবং সংস্কৃতিতে যত বেশি উন্নত সে জাতি ও সমাজ ততবেশি সমৃদ্ধ এবং তার ভিত্তিও অনেক মজবুত। তাই আসুন, আমরা সবাই আপন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লালন করি এবং ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনটিকে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের পরিবর্তে বসন্ত দিবস হিসেবে উদযাপনে সকলেই নুতন সাজে সাঁজিয়ে বাঙ্গালীয়ানাকে বিকশিত করি এবং বাঙ্গালী জাতির সংস্কৃতির শৈল্পিক প্রকাশ ঘটাতে সচেষ্ট হই ও বিদেশি সংস্কৃতি পরিহার করি।
লেখক: কলামিস্ট ও সাংবাদিক