ডেস্ক রিপোর্টঃ বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত ও আধুনিক দৃষ্টিনন্দন করতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০ বছর। তবে প্রাথমিক অবস্থায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত করা হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হবে। এই পাইলট প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালের শেষ দিকে হাজারীবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত পুরো কাজ শুরু করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) আর্থিক সহায়তায় নদীর মূল অবস্থান অটুট রেখে সিঙ্গাপুরের কালং ও সিঙ্গাপুর নদী এবং বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের আদলে সাজানো হচ্ছে বুড়িগঙ্গার দুই তীর।
ইতোমধ্যে ‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে হাজারীবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত আধুনিকায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন এ প্রসঙ্গে বাসসকে বলেন, ‘ঢাকার ইতিহাস বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। এর প্রাণ ফিরে এনে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটা পর্যায়ে চলে যেতে পারব। ফলে বুড়িগঙ্গা হবে রাজধানীর দ্বিতীয় হাতিরঝিল।
ডিএসসিসি’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে মোহনীয় এ প্রকল্পের বিষয়ে এরই মধ্যে মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। তারা প্রকল্পে ১ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাকি টাকা ডিএসসিসি তার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। নান্দনিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করা হবে। অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট, দু’পাড় ঘেঁষে থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ছোট ছোট টেবিল, বিশেষ ধরনের সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে, সব বয়স ও শ্রেণির মানুষের জন্য থাকবে বিনোদন পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ থাকবে। নদীর দুই পাশের প্রশস্ত সড়কে থাকবে উন্নত বাস সার্ভিস। থাকবে তিন বা পাঁচতারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টও।
সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ১৮টি স্লুইসগেট দিয়ে রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে গড়িয়ে আসা কয়েক লাখ টন দূষিত পানি প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ছে। এই পানির সঙ্গে রয়েছে মাটি ও বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক বর্জ্য। এছাড়া হাজারীবাগের ট্যানারি থেকে নির্গত ক্রোমিয়াম, পারদ, ক্লোরিন, দস্তা, নিকেল, সিসা, ক্যাডমিয়াম, অ্যালকালি ও সালফাইড, এমোনিয়া, নাইট্রোজেনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের মাত্রা আরও ভয়াভহ করে তুলছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে রাজধানীর ১৮টি স্যুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ থেকে ৮টি পরিশোধন প্ল্যান্ট বসানো হবে। এতে কাঙ্খিত ফল পাওয়া গেলে সব স্যুয়ারেজ পয়েন্টে পরিশোধন প্ল্যান্ট বসাবে কর্তৃপক্ষ। নদীর পানির মান ঠিক রাখতে সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও জাপানের অনুকরণে রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইনের পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা তিন থেকে চারটি পুকুরে রাখা হবে। প্রথম পুকুরে দূষিত পানি ফিল্টারিং হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুকুর হয়ে নদীতে যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্জ্যমিশ্রিত পানি পুকুরগুলো অতিক্রমের সময় এর সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন তরল ও কঠিন বর্জ্য পুকুরের তলদেশে জমবে। সেখান থেকে এসব বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা অপসারণ করবে। ফলে কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়া পানি স্বাভাবিক নিয়মে পরিশোধিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়বে। এতে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত হবে। পরিবেশ ক্ষতির বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে রাখবে ডিএসসিসি। বর্জ্যমিশ্রিত পানি প্রথমে যে পুকুরে রাখা হবে সেটি বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে, যেখানে সর্বসাধাণের প্রবেশাধিকারও নিষিদ্ধ থাকবে। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের পুকুরের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে দিতে ডিএসসিসি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। যার কারণে বুড়িগঙ্গা হবে বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীদের অভয়ারণ্য।
বি/এস/এস/এন