বিডি নীয়ালা নিউজ(১২ই ফেব্রুয়ারী ১৬) মারুফ সরকার (সিরাজগনজ প্রতিনিধি): ইতিহাসের পাতার কথাকে মনে রাখতে চাইলে সত্যি কথা বলতে কী, তখনকার মহকুমা ছিলো এই সিরাজগঞ্জ শহর। এ শহরের পার্শ্ববর্তী জনপদ এলাকায় অবসর বিনোদন বলতে শুধু সিনেমা হলকে বোঝায়। হাল আমলের সেই বৃটিশ যুগে যমুনা নদীর বাঁকে বাঁকে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা আর মাঝি-মাল্লার বাইচ বোঝায়। সপ্তাশ্চর্য্য বলতে সেই ক্ষণকালের গ্রামোফোন আর বক্স ক্যামেরার উপর ঢাকা কালো কাপড়কে বোঝায়। বেশি কিছু চাইলে বাঙালিয়ানা ঘরাণার চিরন্তন নৈসর্গিক গ্রামকে দেখানো হয়। আর এতেই কোনো তৃপ্তিবোধ না করলে এক আনা দিয়ে বায়োস্কোপ বক্সকে বোঝায়। মেলায় যেকোনো উৎসবের আসর বসা হলে হরেক কিসিমের জিনিসপত্র সাজিয়ে-গুছিয়ে ক্রেতার আকর্ষণ বহুগুণে ছাড়িয়ে যাওয়া কম চাট্টিখানি কথা না। এসব কিছু থেকেও যদি মনের মতো চাহিদা না মিটলে বা ভিন্ন কিছু স্বাদ না পেলে সকল শ্রেণীর মানুষের মনে দোলা খেতে থাকা খেলার মাঠকেই বোঝায়। জনপদের মানুষগুলো যখন দৃশ্যমান বিরাজ করতোম তখন এই মহকুমার জনপদে নিশ্চয় সকলের চোখে-মুখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে আর তাতেই ভালো না লেগে যায় না-ওই ফুটবল খেলাটার উপর আসলে কী! চোখে পড়ে যায় মাঠে থাকা খেলোয়াড়দের দাপাদাপি আর দৌড়াদৌড়ি। না পারলে নিদেনপক্ষে গুতোগুতি। ওটাতো খেলারই একটা অংশ। তাই সই। বল নিয়ে পা চালাচালি করলে যে খেলা হয়ে গেলো, তাই যথেষ্ট মনে হতো না। এদের নিয়ে একটা কিছুর সংকল্পে সিরাজগঞ্জের জনপদের ক্রীড়ানুরাগীরা মাঠেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন। এটা কিন্তু মনের খোরাকে সহসা ঘটনা নয়, বহুদিনের ফসল। বিভিন্ন জনশ্রুতির সূত্রে প্রকাশ, ১৯২০ দশকে সিরাজগঞ্জে বেশ কয়েকটি ফুটবল ক্লাব গঠিত হয়। ধানবান্ধি ফুটবল ক্লাব (টি.এফ.সি), সিরাজগঞ্জ ফুটবল ক্লাব (এস.এফ.সি.), টাউন ক্লাব, ইয়ং স্টার ক্লাব, ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাব প্রভৃতি ক্লাবসমূহের কথা না লিখলে পূর্বের ইতিহাসকে অস্বীকার করা হবে। তখনকার সময়ে এই সিরাজগঞ্জ শহরে আমলাপাড়ার মতো আর অন্য কোথাও ফুটবল ক্লাব বা সংস্থার চিহ্নই ছিলো কিনা তা জানা না গেলেও প্রবীণ ব্যক্তির মুখে মুখে ফেরে। সে আমলে দ্বিতীয় দল যে এসএফসিকে মোকাবেলা করবে তা সেই মানের কোনো ক্লাব ছিল না। না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আজকে যে কেউ শুনলে মনে করা সমীচীন হবে না এই সিরাজগঞ্জ ফুটবল ক্লাবটি কেমন দাপুটের দল ছিলো। বলতে গেলে আলোচনার বাইরে ছিলো এই মহকুমা শহরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একটি এলাকা। সারা সিরাজগঞ্জ মহকুমা শহরে মাত্র একটি মাত্র মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হতো। সেই মাঠটি ছিলো মতিলাল মাঠ (বর্তমানে খান সাহেবের মাঠ)। তবে একটা ঘটনার কথা না লেখা হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। সিরাজগঞ্জ উপকূল তীরবর্তী এলাকা অর্থাৎ উজান ভাটি হতে ১০-১২ মাইল দূরে অবস্থান ছিলো যমুনা নদীর অববাহিকা। এই ১০-১২ মাইলের মধ্যে সিরাজগঞ্জ শহরটা ছিলো বেল ফিল্ড বা ব্যারিয়াল ফিল্ড শহর। এই বেল ফিল্ড এলাকায় ৭-৮টি খেলার মাঠ ছিলো। বড় বড় মাঠে একের পর এক ফুটবল খেলাসহ অন্যান্য খেলাধুলার আসর বসেছে। অনেক বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট সেই ফিল্ড এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সঙ্গত কারণে সেখানে অসংখ্য ফুটবল খেলোয়াড় এতে অংশ নিয়েছেন। অসমর্থিত জনশ্রুতিতে জানা যায়, এ দলটি নাকি ভারতের কলকাতায় উইলিয়াম শীল্ড এবং বহরমপুর শীল্ড ফুটবল প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জন করে এই উত্তরবঙের শ্রেষ্ঠ ক্লাব প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জ ফুটবল ক্লাব। দুটো প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের সঙ্গে ফুটবল খেলে সেখানকার সকল মহলের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। আগেই বলা হয়েছে সিরাজগঞ্জ মহকুমা শহরে একমাত্র এস.এফ.সি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। এর ধারে কাছে চ্যালেঞ্জ জানানো বা দাঁড়ানোর মতো কোনো দুয়েকটি তখনো অবশ্য ক্লাব দল ছিলো। সিরাজগঞ্জ ফুটবল ক্লাবের আয়ু ছিলো ২০ বছরের বেশি কিছু। উত্তরবঙ্গের যে কোনো ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এই এস.এফ.সি। বোম্বাই, পাঞ্জাব, হায়দ্রাবাদ, মহীশুর, লাখনৌ, ঢাকা, করাচী প্রভৃতি নগরে প্রায়ই জ্বলজ্বলে জীবন্ত আলোর মতো সেই ফুটবলটা চলতো। ঢাকায় পূর্ব বাংলার কথা বলতে গেলে ফুটবল খেলার উপমহাদেশকে আদি প্রাচীন মনে করা হলেও এর খেলার গোড়াপত্তন ঘটে ১৯ শতকের প্রারম্ভে। সেই যে ফুটবল খেলা শুরু হলো, ব্যস! আর কোনোদিন থামেনি। দেশে-দেশে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই বাংলার গ্রাম-গঞ্জে। পুরো পূর্ব বাংলায়। উল্লেখিত ঘটনার বিবরণগুলো তৎকালিন কুড়িপাড়ায় জন্ম নেয়া আমলাপাড়া নিবাসী সাবেক প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক, রাজনীতিবিদ ও নিবেদিত প্রাণপুরুষ মরহুম আবদুস সামাদ মিঞার মুখ থেকে শোনা।