করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কাল থেকে শুরু হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। সে হিসেবে আজ মঙ্গলবার ব্যাংকের শেষ কার্যক্রম। সকালে বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ ব্যাংকেই বাইরে গ্রাহকের লম্বা লাইন লক্ষ করা যায়। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন, গ্রাহকের চাপ রয়েছে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলে বাইরে গ্রাহকের লাইনটা বড় হচ্ছে।
মতিঝিলে সব কটি ব্যাংকের সামনেই সকালে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে থেকেই ছিল লম্বা লাইন। সকাল ১০টার দিকে কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে গ্রাহকদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক পরতে দেখা গেছে।
জনতা ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় টাকা তুলতে গেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুর রহিম। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে টাকা তুলতে এসেছি। ৪০ মিনিট ধরে ব্যাংকের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে একবার গিয়ে দেখে এসেছি অনেক ভিড়। আরও কতক্ষণ লাগবে, বুঝতে পারছি না।’
ওয়ান ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী গ্রাহক বেলা সোয়া ১১টার সময় জানান, ২০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। এখনো ভেতরেই ঢুকতে পারেননি।
কারওয়ান বাজারেও একই চিত্র চোখে পড়ে। প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংকসহ প্রায় সব কটি ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে গ্রাহকের ভিড়। এমনকি বুথের সামনেও গ্রাহক উপস্থিতি অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুরে টাউনহলেও ব্যাংকগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। পূবালী ব্যাংকের বাইরে ফুটপাতে গ্রাহকের লম্বা সারি চোখে পড়ে। গুলশানেও ছিল একই চিত্র। সকাল আটটা থেকেই ব্যাংকগুলোর সামনে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সকাল নয়টার দিকে গুলশান ১–এ সিটি ব্যাংকের বাইরে প্রায় ৪৩ জন গ্রাহককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের সামনেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ‘আজ সকাল থেকে গ্রাহকের চাপ অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে। ১০ জন করে একেকবারে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। মূলত এ কারণেই ব্যাংকের বাইরে লাইনগুলো হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মানতে এখন একসঙ্গে সব গ্রাহককে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে বেশি সময়। কোনো কোনো সময় গ্রাহকেরা নিজেদের মধ্যে বিবাদেও জড়িয়ে পড়ছেন।’
আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন চলবে। সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর আগে চাপ বাড়তে পারে, এ কারণে গতকাল সোমবার রাতে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে এ সময়ে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে দিনে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ উত্তোলন করা যাবে। বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ড দিয়ে দিনে ৫০ হাজার টাকা ও কিছু ব্যাংক থেকে বেশি অর্থ উত্তোলন করা যায়। নিজ ব্যাংকের বুথ ও অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে একই সীমা প্রযোজ্য হবে।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে চলাচলে ও কাজে সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। ওই বিধিনিষেধ অনুযায়ী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। গতকাল ব্যাংক চলে বেলা একটা পর্যন্ত।
Pr/A