আন্তর্জাতিক রিপোর্ট : ব্রিটেনের সদ্য ভেঙে দেয়া পার্লামেন্টে যে তিনজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি ছিলেন, তাদের একজন হচ্ছেন লেবার পার্টির টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। ২০১৫ সালে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক নির্বাচনে তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসন থেকে জয়ী হন। এই আসনের জন্য এবারের নির্বাচনে কিরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে? দেখতে গিয়েছিলেন বিবিসির মোয়াজ্জেম হোসেন:

উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের কিলবার্ন এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বেরিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। একটু এগুতেই এক তরুণ এগিয়ে এসে তর্ক জুড়ে দিলেন তাঁর সঙ্গে।ইমিগ্রেশন, অর্থনীতি, ব্রেক্সিট, অনেক প্রশ্ন তাঁর। ধৈর্য ধরে তার নানা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলেন টিউলিপ সিদ্দিক।মাত্র দু বছর আগের নির্বাচনে হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসন থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এই দুবছরেই পার্লামেন্টে নানা ইস্যুতে সরব থেকে গণমাধ্যমের নজর কেড়েছেন তিনি।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ায় এই মূহুর্তে টিউলিপ সিদ্দিক আর এমপি নন, কিন্তু তারপরও নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার কাছেই নানা সমস্যা তুলে সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছিলেন এলাকার কয়েকজন ভোটার।হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্নে একদিকে যেমন উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের বাস, অন্যদিকে অনেক দরিদ্র মানুষও আছেন এখানে। আছেন হাজার খানেকের মতো বাংলাদেশি ভোটারও।

কিলবার্নের একটি মসজিদ-কাম-কমিউনিটি সেন্টারে জড়ো হয়েছিলেন এরকম কিছু বাংলাদেশি ভোটার এবং লন্ডনের বাংলা গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সেখানে টিউলিপ সিদ্দিক কথা বললেন তাদের সঙ্গে।গত বছর ব্রিটেনে যখন ব্রেক্সিট গণভোট হয়েছিল, তখন এই এলাকার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও এই ছিলেন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। টিউলিপ স্বীকার করলেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় এই ব্রেক্সিটের ইস্যু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

“আমার আসনে ১৭ হাজার ইইউ নাগরিক আছে। এদের একজনও জানে না ব্রেক্সিটের পর এরা কি এখানে থাকতে পারবে, নাকি তাদের চলে যেতে হবে। এদের এদেশে থাকার অধিকারের কোন নিশ্চয়তা নেই। আমি প্রচারণায় এসবই তুলে ধরছি।”তিনি কি আশা করছেন যে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে নেয়া জোরালো অবস্থান তাঁকে ভোটে জিততে সাহায্য করবে?এই ইস্যুটা আমাকে বেশ সাহায্য করছে। মানুষ জানে যে আমি ওয়েস্টমিনস্টারে ঢুকে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে ভুলে যাইনি। পার্লামেন্টে আমি যখনই ভোট দিয়েছি, আমার সংসদীয় এলাকার ভোটারদের কথা মনে রেখেই ভোট দিয়েছি। আমি আমার পার্টির হুইপের কথা মেনে ভোট দেইনি। আমি আমার ফ্রন্ট বেঞ্চ পজিশন থেকে পর্যন্ত পদত্যাগ করেছি আমার এলাকার কথা মনে রেখে। ইনশাল্লাহ মানুষ এসব মনে রাখবে।”

হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্নের এই আসনটি বার বার হাত বদল হয়েছে লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে। গেলবার টিউলিপ সিদ্দিক এই আসন জমিতেছিলেন মাত্র এক হাজার ১৩৮ ভোটে। কনজারভেটিভ পার্টি যেসব আসন লেবার পার্টির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য টার্গেট করেছে, তার একটি হচ্ছে এই আসন।কিলবার্নেরই আরেকটি এলাকার এক কমিউনিটি সেন্টারে সন্ধ্যায় সব প্রার্থীকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এক মুখোমুখি বিতর্কের। সেখানে হাজির টিউলিপ সিদ্দিকীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ক্লেয়ার লুইস লেল্যান্ড। তিনি খোলাখুলিই স্বীকার করলেন, নির্বাচনী ফল যে কোন দিকেই যেতে পারে, তাই প্রতিটি ভোটের জন্যই লড়তে হচ্ছে তাকে।

“এই সংসদীয় আসনে আগের নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে খুব কম ব্যবধানে। ২০১৫ সালে এটি ছিল এক হাজার একশো ৩৮। তার আগের বার ছিল মাত্র ৪২ ভোট। সুতরাং এটা এমন একটা আসন, যেখানে প্রত্যেকটি ভোটই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একারণেই আমরা প্রত্যেকটি এলাকায় যাচ্ছি, প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলছি।”ক্লেয়ার লুইস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী টিউলিপ সিদ্দিককে কিভাবে দেখেন?

“আমি আর টিউলিপ আসলে পরস্পরকে জানি বেশ কিছুদিন ধরে। ২০১০ সাল থেকে আমরা স্থানীয় কাউন্সিলে এক সঙ্গে কাজ করেছি। তবে আমি আজকে পত্রিকায় দেখলাম টিউলিপ আমাকে টেরেজা মে’র ‘চামচা’ বলেছে। আমার মনে হয় এটা আমার প্রতি অন্যায়” হেসে বললেন ক্লেয়ার লুইস।লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি গতবার এখানে তৃতীয় অবস্থানে ছিল। তাদের প্রার্থী কার্সটি অ্যালান আশা করছেন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে তাদের শক্ত অবস্থান তাদের বিরাট সুবিধা দেবে।

“এই ইস্যুতে মানুষের মধ্যে একটা বিরাট আবেগ কাজ করছে। এই সংসদীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ ইইউ নাগরিক আছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের পক্ষ হয়ে ভোট দেয়, আমি অবাক হব না। এটা তাদের জন্য একটা সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ তারা জানে, দুই বছরের মধ্যে তাদের জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছেঅভিবাসন বিরোধী কট্টর ডানপন্থী দল ইউকিপ গেলবার এই আসনে পেয়েছিল প্রায় দেড় হাজার ভোট। তারা এবার প্রার্থী না দেয়ায় টিউলিপ সমর্থকরা চিন্তিত যে এদের ভোট হয়তো কনজারভেটিভদের বাক্সে যাবে।

বলছিলেন স্থানীয় এক লেবার কাউন্সিলর পারভেজ আহমেদ।”ইউকিপের ভোট যদি কনজারভেটিভরা পায়, তাহলে আমাদের দেড় হাজার ভোটের যে ব্যবধান, সেটা তো আর থাকে না। তাই আমরা একটু চিন্তিত। সেজন্যে আমরা আরও জোরেশোরে কাজ করছি।”

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে