আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকেঃ শ্রমিক আন্দোলনের মুখে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। ৭ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে খনির কয়লা উত্তোলন। গত মঙ্গলবার কর্মকর্তা-শ্রমিক সংঘর্ষের জের ধরে খনি কর্র্র্তৃপক্ষ ১১০ শ্রমিকের নামে পৃথক দুটি মামলা করায় প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী। খনি গেটে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সভাপতি ওয়াজেদ আলী, খনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বুলবুল, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ১৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আউট সোর্সিং শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ প্রদান, বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান, প্রফিট বোনাস, প্রতি বছর শতকরা ৪০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ, সকল শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গ্রাচুইটি প্রদান, আন্ডারগ্রাউন্ড শ্রমিকদের ৬ ঘন্টা ডিউটি করানো, প্রফিট বোনাসসহ বৈশাখী ভাতা চালু, ওভারটাইম ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্থ ২০ টি গ্রামের বাড়ী-ঘরের দ্রুত স্থায়ী সমাধান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকুরী প্রদান করছে না খনি কর্তৃপক্ষ। গত ২৬ এপ্রিল শ্রমিকদের ১৩ ও এলাকাবাসী ৬ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ১২ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় ১৩ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করে খনির ৮ শতাধিক শ্রমিক। তিনি বলেন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কোন সমঝোতা বৈঠককে বসবে না শ্রমিকরা। মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রমিকরা নয়, খনি কর্মকর্তারাই তাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দীন আহম্মেদ জানান, কয়লা উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বৈদেশিক ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম কর্তৃক নিয়োজিত। তাদের বেতন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকেন। তাদের বেতন ১০ আগষ্ট ১৭ সাল থেকে নতুন চুক্তি অনুযায়ী তিনগুন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অথচ তারা ১৩ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছে। তিনি জানান মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে খনির ৪ কর্মকর্তা কর্মস্থলে প্রবেশের জন্য খনি গেটে আসলে শ্রমিকরা তাদের মারধর শুরু করে এবং মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা দুইটি সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে খনির জিএম (পিএন্ডই) এবিএম কামরুজ্জামানসহ ২৫ জনের মতো কর্মকর্তা তাদের উদ্ধারে খনি গেটে এগিয়ে আসেন। এ সময় শ্রমিকরা তাদের উপরও হামলা চালালে পুলিশসহ ২২জন আহত হন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে খনিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় বাজার করতে পারছেন না তারা। খনিতে কর্মরত ৩০০ জন বিদেশী নাগরিক আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পক্ষান্তরে আন্দোলনরত শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর দাবী মঙ্গলবার সকালে ৩য় দিনের মতো খনির প্রধান ফটকের সামনে পূর্বের দিনের মতই তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি চালিয়ে আসছিলো। কর্মবিরতি পালন কালে হঠাৎ শতাধিক কর্মকর্তা খনি থেকে বাহিরে এসে তাদের উপর চড়াও হলে দুপক্ষের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, চলমান শ্রমিক আন্দোলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার খনি কর্মকর্তা ও শ্রমিক-ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় খনি কর্তৃপক্ষ ১১০ জন শ্রমিকের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। প্রথম দিকে শ্রমিকরা খনি গেটে অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখলেও পরে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা।