মহামারি, লকডাউন আর ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর মধ্যে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সম্ভবত শিশুদের ওপর। পড়াশোনার ক্ষতি তো হচ্ছেই, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ। অনেকেই আবার শিকার হচ্ছে পারিবারিক নির্যাতন-অবহেলার। সন্তানের মানসিক অবস্থাকে আমলে নেন না এমন মা-বাবার অভাব নেই। শিশুদের মনে কী চলছে, তারা আদৌ খুশি কি-না, সে বিষয়ে উদাসীন বহু অভিভাবক ও শিক্ষক। খালি বাড়তে থাকে তুলনা, অযথা প্রত্যাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার চাপ। আর তার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কোমলমতি প্রাণ।
সম্প্রতি ভারতে শিশু-আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। আর তাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতে আত্মঘাতী হয়েছে ২৪ হাজার ৫৬৮ শিশু। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৩২৫ জনই মেয়ে।
সবচেয়ে বেশি শিশু আত্মহত্যা করেছে মধ্য প্রদেশে। ওই তিন বছরে সেখানে ৩ হাজার ১১৫ জন নিজের প্রাণ নিয়েছে। এরপরেই পশ্চিমবঙ্গের নাম। রাজ্যটিতে তিন বছরে ২ হাজার ৮০২টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। তৃতীয়স্থানে মহারাষ্ট্র।
এনসিআরবির প্রতিবেদনে প্রতিটি আত্মহত্যার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, মোট আত্মহত্যার মধ্যে ৪ হাজার ৪৬ জনের ক্ষেত্রে কারণ ছিল ‘পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া’। অর্থাৎ পড়াশোনার চাপ অথবা এ সংক্রান্ত লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে এতগুলো শিশু।
পরিবার থেকে জোরপূর্বক করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় আত্মঘাতী হয়েছে আরও ৬৩৯ জন, এদের মধ্যে ৪১১ জনই মেয়ে। এছাড়া শারীরিক নিগ্রহ, প্রিয়জনের মৃত্যু, মাদকাসক্তির কারণেও আত্মহত্যা করেছে অনেকে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বা বিয়ে সংক্রান্ত চাপ আসে প্রধানত বাবা-মায়ের কাছ থেকেই। এ বিষয়ে এক মনোবিদ বলেন, পড়াশোনার জন্য বকাঝকা, মারধর, অপমান বা অন্যের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। বরং বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের উত্সাহ দেয়া, বন্ধুর মতো আচরণ করা, দুঃসময়ে পাশে থাকা ও প্রয়োজনে সময় নিয়ে বোঝানো। পরীক্ষার নম্বরই যে জীবনে সব নয়, তা নিজে বুঝুন, বাচ্চাদের বোঝান। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। সন্তানকে প্রশ্ন করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি ভালো অভিভাবক তো?
Jag/N