সাব্বির আলম বাবু: বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের আয়োজনে মঙ্গলবার থেকে ভোলায় জলচর পরিযায়ী পাখিশুমারি শুরু হয়েছে। ৩৬ বছর ধরে এই শুমারি হয়ে আসছে। ভোলা খালের খেয়াঘাট থেকে পাখিগবেষক ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়েম ইউ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শুমারি দল ভোলার উত্তরে ট্রলার যাত্রার মাধ্যমে শুমারির কার্যক্রম শুরু করে। দলটি ৯ দিন (২ থেকে ১০ জানুয়ারি) নদীতে থাকবে। উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি দল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব ১৯৮৭ সাল থেকে ভোলায় জলচর পাখিশুমারি করে আসছে। এই দলের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফয়সাল, পাখিবিশেষজ্ঞ নাজিম উদ্দিন খান, ভোলা অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের আহ্বায়ক এস এম বাহাউদ্দীন প্রমুখ। দলটি ভোলা খাল থেকে তেঁতুলিয়া, ইলিশা, মেঘনা, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার সাগর মোহনা, বুড়া গৌরাঙ্গ নদী হয়ে আবার তেঁতুলিয়া নদী দিয়ে ১০ জানুয়ারি আগের খেয়াঘাটে আসবে। পাখিশুমারি দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের মধ্যে ভোলায় সবচেয়ে বেশি জলচর পরিযায়ী পাখি আসে, যা মোট পাখির প্রায় ৬০ ভাগ। এ অঞ্চলে অনেক বিপন্ন পাখি দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর পাখিশুমারি হয়, ভোলার পাখিশুমারি তারই অংশ। ভোলার চারপাশের নদী ও সাগর মোহনার মধ্যে জেগে ওঠা চরে শুমারি দল ট্রলার ও নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে জলচর পাখি গণনা করবে। কীভাবে পাখি গণনা করা হয়, তা জানতে চাইলে এম এ মুহিত বলেন, ‘আমরা পাখি গণনা করি ব্লক ম্যাথডে (পদ্ধতি)। গণনার কাজে টেলিস্কোপ (দূরবীক্ষণযন্ত্র) ব্যবহার করি। দূরের পাখি ও পাখির ঝাঁক কাছে দেখা যায়। তখন একটা একটা করে গণনা হয়। যখন ঝাঁক ধরে পাখি থাকে, তখন ধারণা করে গণনা করা হয়। এটা পাখি পর্যবেক্ষকদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। দলের সবার কাছে দূরবীক্ষণযন্ত্র থাকে। দলের একাধিকজন গণনা করেন। সবার মতামত নিয়ে যেটি গ্রহণযোগ্য হয়, সে সংখ্যা লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপরও ঝাঁক গণনার ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিক হয় না। উনিশ-বিশ হয়।’
পাখি গণনার উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে সায়েম ইউ চৌধুরী বলেন, ‘পাখি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিযায়ী পাখি যারা শীতে এ দেশে আসে। এদের সংখ্যা দিয়ে আমরা জানতে পারি, পৃথিবীতে এদের সংখ্যা কত, পাখির অবস্থান নিরূপণ করতে পারি। উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য কেমন। পাখির বিচরণ একটি বড় মাপযন্ত্র। দিকনির্দেশনা করা যায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর উপকূলীয় অঞ্চল এমন। বাংলাদেশে যদি পাখি কমে যায়, তাহলে মনে করতে হবে, এখানে সমস্যা আছে, অথবা উড়ার পথে সমস্যা আছে। সমস্যার আলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এতে পাখিরও উপকার হবে, স্থানীয় মানুষের ও পরিবেশেরও উপকার হবে।’