সাব্বির আলম বাবু, ভোলা, প্রতিনিধিঃ বর্তমানে ২২দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা চলছে মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য। এসময় জেলেদের টিকে থাকার জন্য মৎস্য বিভাগ প্রণোদনা হিসাবে জেলেদেরকে ২৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে। তাও আবার সকল জেলে এ চাল পাচ্ছে না। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ভোলার জেলেপল্লীগুলোতে চলছে চরম হতাশা। বেকার জেলেদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূর্বিসহ হয়ে পড়ছে জেলেদের সংসার জীবন। এ অবস্থায় প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি করছে জেলেরা। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে কম ইলিশ ধরতে পেরেছে জেলেরা। যে কারণে অভাব তাদের পিছু ছাড়েনি কোনভাবেই। প্রতি বছর এসময় জেলেরা ইলিশের আয়ে ঘর-বাড়ী আর জাল নৌকা তৈরীসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকে অথচ এবছর এসময় তাদের দিন কাটছে অভাব-অনটন আর ধার-দেনা পরিশোধের দুশ্চিন্তায়। একদিকে মৌসূমে কোন আয় করতে পারেনি অন্যদিকে এখন চলছে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, আছে সংসারের ব্যয়, সমিতির ঋণের কিস্তি। অথচ এসবের যোগান দেয়ার কোন সুযোগ নেই জেলেদের। কেউ কেউ প্রণোদনা হিসাবে ২৫ কেজি চাল পেলেও অনেক জেলে কিছুই পাচ্ছে না। টানা ২২দিন আয় রোজগারহীন জেলে পরিবারগুলোর মাঝে এখন নেমে এসেছে চরম দূর্দশা। কোনভাবেই সংসার চালাতে পারছে না তারা। ফলে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ শিকারে নামছে। অনেকে আবার নিষেধাজ্ঞা মানলেও সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রণোদনা না বাড়ালে জেলেদের দূর্ভোগের পাশা-পাশি সরকারের ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন ভোলার তুলাতুলি ঘাটের জেলে মোঃ বশির বলেন, এবারকার সিজনে আমরা যারা জেলেরা আছি নদীতে জাল ফালাইছি ঠিকই কিন্তু কোন মাছ পাইনি। ধার-দেনা কইরা, দোকানের থেকে বাকি খাইয়া কোনরকমে সংসার চালাইছি। অহন সরকার দিছে অভিযান আর অভিযানের মধ্যে দিছে ২৫ কেজি চাউল। একটা সংসারের ৬-৭ জন আমাদের খাওয়ার লোক এছাড়া ওষুধসহ অন্যান্য খরচ ২২ বাইশ দিন কিভাবে আমরা চালাইতে পারি? মোঃ জসিম মাঝি বলেন, এই ২২দিনের অভিযানে সরকার আমাগোরে ২৫ কেজি চাল দিছে। ২৫ কেজি চাউলে কি একটা মানুষের ২২দিন সংসার চলে? সরকার যদি চাউলের পাশাপাশি আমাদেরকে আরো কিছু দিত তাইলে আমরা একটু ভালোমতো চলতে পারতাম। ইলিশা ঘাটের মোঃ আল আমিন মাঝি বলেন, সরকার ২২দিনের অভিযান দিছে, অভিযানের এতদিন শেষ হয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন কিছুই পাইনি। ১ কেজি চাউলও পাইলাম না। তাহলে এই বাইশটা দিন আমরা কিভাবে চলি, কিভাবে থাকি, কেউ আমাদের কোন খোঁজ-খবরও এখন পর্যন্ত নেয় নি আর আমরা যদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য কইরা নদীতে যাই, তাহলে তো আমাদেরকে জেল-জরিমানা করবো। আমরা বউ-বাচ্চা লইয়া অনেক কষ্টে আছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ১ লাখ ৬৫ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্য থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। যারা নিবন্ধনের বাইরে আছে তাদের নিবন্ধনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রণোদনার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্য নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ অব্যাহত আছে।
২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ভোলা জেলার ৭ উপজেলা থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দেশে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৩ ভাগের ১ ভাগ।