ডেস্ক রিপোর্ট : জেলার দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যশন ও মনপুরায় কাঁকড়া শিকার করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানে প্রচুর ছোট-বড় খাল থাকায় প্রকাকৃতিক ভাবে ব্যাপক কাঁকড়া উৎপাদন হয়। এছাড়া এই অঞ্চলটি সাগর ও নদী প্রধান হওয়াতে খাল ও পুকুরে জাল দিয়ে অনেকেই এখন কাকড়া চাষ করছেন। এখানকার পানি লবনাক্ত হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় কাঁকড়া চাষে। তাই কাঁকড়া আহরনে অনেক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে এখানে।
উপজেলার দক্ষিণে চর পাতিলা, চর মন্তাজ, চর কচ্ছপিয়া, চর দাতভাঙা, কালকিনি, মানিকা, নিজাম, ঢালচর, কুররি-মুকররিসহ ম্যানগ্রোভ বন জুড়ে আছে সহস্রাধিক ছোট-বড় খাল। প্রাকৃতিক ভাবেই এসব খালে বেড়ে উঠছে বিপুল সংখ্যক কাঁকড়া। এসব কাঁকড়াকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কাঁকড়ার লাভজনক ব্যবসা। চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার প্রায় ১০ হাজার জেলের আয়ের উৎস কাঁকড়ার সাথে জড়িত। দিনি দিন এ সংখ্যা আরো বাড়ছে।
কাঁকড়া চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কম খরচ ও সল্প পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই কাঁকড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়া শিকার করে অনেকেই ভালো আছেন বর্তমানে। নদী-খালে কখোনো কখোনো বড় সাইজের কাঁকড়া ধরা পড়ে। যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়া চাষের কাঁকড়ার বেশ কদর রয়েছে বাজারগুলোতে। এসব কাঁকড়ার খাদ্যের মধ্যে রয়েছে শুটকি, কুইচ্ছা কুচিলা, চেওয়া মাছ, চিংড়িগুড়া, আলুপা । রোগ-বালাইও সাধারনত হয়না। খাল ও পুকুরে নেট দিয়ে আটকিয়ে কাঁকড়ার হ্যাচারিগুলো তৈরি করা হয়।
চর কুকরি-মুকরির কাঁকড়া শিকারী জয়নাল মিয় জানান, তিনি ২০১৩ সাল থেকে কাঁকড়া শিকারে নামেন। মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেন। শুধু জয়নাল মিয়া নয়, ফিরোজ আলী, রুস্তম ফরাজী, আলি হোসেন, কালাম মাঝি, বারেক হাওলাদারসহ অনেকেই এ পেশায় অসতে শুরু করছেনে। কাঁকড়া শিকার করে তারা পরিবারের অভাব দূর ও নিজে আতœনির্ভরশীল হচ্ছেন।শিকার করা কাঁকড়া ও চাষের কাঁকড়া বিক্রি হয় স্থানীয় আড়তগুলোতে। ১’শ গ্রাম ওজনের নিচে প্রতি কেজি কাঁকড়া বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ২’শ গ্রাম প্রতি কেজি ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। ৩’শ গ্রাম ওজনের কেজি ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা। ৪’শ থেকে ৫’শ গ্রাম ওজনের কেজি বিক্রি হয় হাজার টাকারও উপরে। এসব কাঁকড়া লঞ্চযোগে ঢাকার বাজারে পাঠানো হয়।
বিদেশিদের কাছে এর কদর বেশি হওয়ায় রাজধানীর বহু নামী-দামি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য দেশেও এসব কাঁকড়া পাঠানো হচ্ছে।কাঁকড়া চাষি ফিরোজ মেম্বার জানান, তিনি ২০১৩ সালে এফডিবি সংস্থার প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে নেট দিয়ে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পূঁজির চেয়েও কয়েকগুন টাকা আয় করেন। এখন তিনি কাঁকড়া চাষকে প্রধান পেশা হিসাবে নিয়েছেন। তার মত এখন অনেকেই এই পেশায় আসতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম বাসস’কে জানান, কাঁকড়া চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। গত বছর চরফ্যশনে ১৬টি ও মনপুরায় ১৪টি মিলিয়ে মোট ৩১টি কাঁকড়ার খামারের প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে খাঁচা, নেটসহ বিভিন্ন উপকরন সহয়তাসহ সব ধরনের পেরামর্শমূলক সেবা দেওয়া হয় কাঁকড়া চাষিদের।
বি/এস/এস/এন