ঢাকা জেলার অফিসে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালি দ্বাদশ সংসদ নিবার্চনের মনোনয়নপত্র বিক্রি উদ্বোধন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের  বলেন, ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিটিং করা হবে শুক্রবার বিকেল ৩টায়। আর মনোনয়নপত্র দেয়ার কাজ চলবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। আর ঢাকা জেলার অফিসে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালি দ্বাদশ সংসদ নিবার্চনের মনোনয়নপত্র উদ্বোধন করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একা ক্ষমতায় যেতে চায় না। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করেই ক্ষমতায় যেতে চায়।

এসময় নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। এটিকে স্বাধীন করেছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়েছি।

‘নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সেই নিয়ম মাফিক নির্বাচনের তারিখ দেয়া হয়েছে,’ যোগ করেন কাদের।

তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশনকে সব রকম সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। গণতন্ত্রকে অনুসরণ করেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা লড়াই-সংগ্রাম করেছি।

শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন শুরু করেছিলেন। আমাদের গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। ২১ বছর আমরা গণতন্ত্রের দেখা পাইনি। আমাদের বার বার ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয়েছে। এরপরও আমরা লড়াই করে করে টিকে আছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন। এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছেন। শেখ হাসিনা আপসহীনভাবে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছেন।

এসময় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ শহরে (ঢাকা) অনেকগুলো সমাবেশ হয়েছে। আমাদের শান্তি সমাবেশের কারণে তারা বাধাগ্রস্ত হয়নি। উলটো বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস করেছে। একজন পুলিশ সদস্যকে পেটাতে পেটাতে তারা মেরে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর করেছে। তারা কখনোই এভাবে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না৷ জনগণের ক্ষতি করে কখনো ক্ষমতায় আসা যায় না।’

এর আগে বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৭ নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম কাজী জাফর উল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন-

এ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করবেন ভোটাররা। এবার সারা দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকেরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি (রোববার)। বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী-

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এর আগে বিকেল ৫টায় বর্তমান কমিশনের ২৬তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় তফসিল চূড়ান্ত করা হয়।

সংবিধান অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা। ডেডলাইন ২৯ জানুয়ারি। অর্থাৎ জানুয়ারির শুরু থেকে যেকোনো সময় তফসিল দিতে পারবে কমিশন। চলতি সংসদের ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই ভোট হতে হবে।

ভোটের প্রস্তুতিতে আগেই রোডম্যাপ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুসারে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, ব্যালট বাদে ভোটের বাকি সরঞ্জাম জেলায় জেলায় পৌঁছে দেয়াসহ সব কাজ সেরেছে নির্ধারিত সময়েই। রেওয়াজ অনুযায়ী ৯ নভেম্বর বঙ্গভবনে ভোটের সবশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করে কমিশন।

গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দশম সংসদ ভোট হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তার আগে নবম সংসদ নির্বাচনের তারিখ ছিল ২৯ ডিসেম্বর। অর্থাৎ সবশেষ জাতীয় নির্বাচনগুলো ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে