ডেস্ক রিপোর্টঃ মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানির গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ বস্ত্র আইন-২০১৮ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এই নতুন আইনের লক্ষ্যই হচ্ছে বস্ত্রজাত পণ্যের মান বজায় রাখা, কারণ তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছে।
তিনি বলেন, গত বছরে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। গত অর্থ বছরে ২৯.২৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। তিনি বলেন, খসড়া আইনের সেকশন ৬ অনুযায়ি, আইনটি প্রণয়নের লক্ষ্য অজর্নে যে কোন বস্ত্র শিল্পের জন্য সরকার ইনসেন্টিভ দিতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের আলোকে একটি অধিদপ্তর গঠিত হবে। সরকার সংস্থার প্রধান হিসাবে একজন মহাপরিচালক নিয়োগ দেবে। সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, ডিজি সংস্থার রেজিষ্টার হিসাবে কাজ করবেন। উৎপাদিত পণ্যে ব্যবহৃত রং ও অন্যান্য কেমিকেলসহ অন্যান্য বিষয়ের মান যাচাই করে দেখতে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকবেন। তিনি আরো বলেন, সরকার এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলেন, নিবন্ধন নেয়ার সময়ে কোন মিথ্যা তথ্য দেয়া হলে সংস্থা কোম্পানিটির নিবন্ধন বাতিল অথবা স্থগিত করতে পরবে। তিনি বলেন, সরকার বায়িং হাউজগুলোও রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসবে। গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন প্রদান ও নবায়ন করা হবে। শফিউল আলম বলেন, আইনে উল্লেখিত বিধানের আলোকে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যে কোন শিল্প পরিদশর্ন করতে পারবে। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন সরকারকে দিতে পারবে। যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে আপিল করতে পারবে।
শফিউল আলম বলেন, সরকার অথবা অধিদফতরের নির্দেশে নির্ধারিতব্য শর্ত অনুযায়ি, যে কোন ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা অথবা সংস্থাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জেলা সদরে এক বা একাধিক ‘শিশু ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপনের বিধান রেখে আজ মন্ত্রিপরিষদ ‘শিশু (সংশোধিত) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, মামলার প্রক্রিয়ায় যাতে বিলম্ব না ঘটে সে জন্য পুনরায় এই আইনকে বিস্তৃত ও উন্নত করে ‘শিশু আইন, ২০১৩’ সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, সংশোধিত খসড়া আইন অনুযায়ী, এই আইন বিদ্যমান ‘নারী ও শিশু অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ ‘শিশু ট্রাইব্যুনাল’ হিসেবে কাজ করবে। যা শিশুদের দ্বারা অপরাধ সংঘটন না করার অঙ্গীকারের চেষ্টা করবে।
মন্ত্রিপরিষদ ‘বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধনী) আইন, ২০১৮’-এর খসড়ারও সম্মতি দিয়েছে। যাতে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে ‘কর্মচারি’ হিসেবে উল্লেখ করার বিধান রাখা হয়েছে।
আলম বলেন, এই আইনটি বিদ্যমান ২০০৪ সালের আইনের সংশোধন করে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে বোর্ডের ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয় এবং গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামসহ বিভিন্ন সঞ্চয়ের কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
খসড়াটি আইন অনুযায়ী যে কোনো কর্মচারি ‘বেনেভোলেন্ট ফান্ড’-এ তার মূল বেতনের শতকরা এক ভাগ সঞ্চয় জমা করবে। যা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৫০ টাকার পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা হবে। এ ছাড়া গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম হবে শতকরা শূন্য দশমিক ৭০ ভাগ, যা বিদ্যমান টাকার স্থলে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা হবে। একজন কর্মচারি একবার সাধারণ চিকিৎসা মঞ্জুরি হিসেবে বিদ্যমান ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪০ হাজার টাকা পাবেন। অন্যদিকে যে কোন কর্মচারি দাফনের জন্য বিদ্যমান ৫ হাজার টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা প্রাপ্য হবেন।
এ ছাড়া একজন কর্মচারি যৌথ বীমা মঞ্জুরি হিসেবে একবারে এক লাখ টাকার স্থলে দুই লাখ টাকা পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিদ্যমান আইনকে আরো সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন, ২০১৮’-এর খসড়ারও অনুমোদন দিয়েছে।
আলম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং চায়না হুয়াদিয়ান হংকং কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে ৫০:৫০ অংশীদারিত্বে ১৩২০ মেগাওয়াট বিশিষ্ট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে যৌথ কোম্পানি গঠনের যৌথ চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেয়।
তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ এই কোম্পানির সংঘস্মারক এবং আর্টিক্যালেরও অনুমোদন প্রদান করে।
B/S/S/N.