ডেস্ক রিপোর্ট: নতুন একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেছেন একজন সৌখিন জ্যোতির্বিদ – ধারনা করা হচ্ছে এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের।

তাই যদি হয়, তবে এটি হবে ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত দীর্ঘায়ত মহাজাগতিক বস্তু ‘ওমুয়ামুয়া’র পর দ্বিতীয় কোনো সৌরজগত-বহির্ভূত বস্তু, বিজ্ঞানীরা যেগুলোকে সাধারণভাবে অভিহিত করেন ‘ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট’ হিসেবে ।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনর প্লানেট সেন্টার (এমপিসি) এই আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।

মহাজাগতিক বস্তুটির একটি ‘হাইপারবোলিক’ কক্ষপথ রয়েছে, আর সেজন্যেই প্রমাণ হয় যে এটি আমাদের পরিচিত জগতের বাইরের।

হাইপারবোলিক কক্ষপথ পূর্ণ বৃত্তের পরিসরের আকার সবসময় মেনে চলে না। এটির আকার গোল হলেও তা সব সময় বৃত্তের মতো হয় না।

একটি নিখুঁত বৃত্তের কেন্দ্রের কৌণিক পরিমাণ হয় শূণ্য ডিগ্রি। বহু গ্রহ, গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কেন্দ্রীয় দূরত্ব ১ থেকে ০ পর্যন্ত হয়।

সদ্য আবিষ্কৃত এই বস্তুটির প্রথমে পরিচয় দেয়া হয় জিবি ০০২৩৪, যেটি বর্তমানে ধূমকেতু সি/২০১৯ কিউ ৪ (বোরিসভ) নামে পরিচিত – সবশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী যার কেন্দ্রীয় কৌণিক পরিমাণ ৩.২।

গত ৩০শে অগাস্ট বাখচিসারাই-এর ক্রিমিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরি থেকে একজন অপেশাদার জ্যোতির্বিদ প্রথম এটিকে সনাক্ত করেন। তার নাম গেন্নাদি বরিসভ। ওই সময় এটির অবস্থান ছিল সূর্যে থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বা ৪৫ কোটি কিলোমিটার দূরে।

‘ওমুয়ামুয়া’ আবিষ্কৃত হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯শে অক্টোবর। প্রাথমিকভাবে হাইপারবোলিক ট্র্যাজেক্টোরির বৈশিষ্টের ভিত্তিতে এটিকে ধূমকেতু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

যদিও কমা’র মতো ধূমকেতুর আকৃতিতে যে মাথা ও লেজ থাকার কথা, সেসব অনুপস্থিত ছিল ওমুয়ামুয়ার ক্ষেত্রে।

সেদিক থেকে সি/২০১৯ কিউ ৪ (বরিসভ) একটি সক্রিয় ধূমকেতু – লেজসহ দৃশ্যমান কোমার আকৃতি রয়েছে এটির।

ছোট্ট এবং অজ্ঞাত ওমুয়াময়ার তুলনায় নতুন এই ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট অনেক বড় – প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং উজ্জ্বল।

এছাড়াও, ওমুয়ামুয়া দৃশ্যমান হয়েছিল পেরিহেলিয়নে বা সূর্যের একেবারে নিকটবর্তী অবস্থানে যাওয়ার পর। এরপর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বহু প্রশ্নের জবাব মেলার আগেই এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়।

বিপরীতে সি/২০১৯ কিউ ৪ (বরিসভ) পেরিহেলিয়ন অঞ্চলে পৌঁছাবে ১০শে ডিসেম্বর, কিন্তু এখন থেকেই এটিকে আমাদের সৌরমন্ডলে দেখা যাচ্ছে।

মাইনর প্লানেট সেন্টার (এমপিসি) থেকে এটির প্রতি লক্ষ্য রাখতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এমপিসির হিসেব অনুযায়ী, অপ্রত্যাশিতভাবে বিলীন বা অদৃশ্য না হয়ে গেলে এটিকে অন্তত এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

দূরবর্তী কোনো তারকা থেকে উৎপন্ন বস্তু হিসেবে এটি পর্যবেক্ষণে বহু তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসি’র নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট কার্ল ব্যাটামস এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, “ওমুয়ামুয়ার ক্ষেত্রে বিতর্ক ছিল যে সেটি গ্রহাণু না ধূমকেতু; এটি অবশ্যই একটি ধূমকেতু।”

তার মতে, এই আবিষ্কার সৌর জগতের বাইরের একটি ধূমকেতু হিসেবে পৃথিবীর সৌর মন্ডলের বস্তুর সাথে তুলনা করার একটি বড় সুযোগ করে দিচ্ছে।

টেক্সাসের সান আন্তোনিও’র সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সাইমন পোর্টার টুইট করে বলেন, “ধূমকেতুটির উজ্জ্বল অগ্রভাগ থাকার কারণে আমরা কিউ ৪-এর খুব চমৎকার বর্ণালী পাবো এবং আশা করি এর ফলে আইসোটোপিক অনুপাত বের করা সম্ভব হবে।”

একই রাসায়নিক উপাদানের বিভিন্ন রুপকে বলে আইসোটোপ। মি. পোর্টারের মতে, আমাদের সৌরমন্ডলের ধূমকেতুর চেয়ে এটির আইসোটপিক অনুপাত ভিন্ন হতে পারে।

B/B/C/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে