ডেস্ক রিপোর্টঃ ইরশাদ হচ্ছে, প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে, তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়। (সূরা আলে-ইমরান : ১৮৫)। আলোচ্য আয়াতটিতে তিনটি বিষয়ের প্রতি ইশারা করা করছে। এক. যাদের ভিতরে প্রাণ আছে তারা একদিন প্রাণহীন হবে। অর্থাৎ তাদের মরতে হবে। দুই. কেয়ামতের দিন পূর্ণ বদলা দেওয়া হবে। অর্থাৎ জাহান্নামিরাও পূর্ণ বদলা পাবে এবং জান্নাতিরাও পূর্ণ বদলা পাবে। জাহান্নামিরা তাদের বদলা নিয়ে জাহান্নামে যাবে। আর জান্নাতিরা তাদের বদলা নিয়ে জান্নাতে যাবে। তিন. এই চাকচিক্যময় দুনিয়া ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এ দুনিয়া বা দুনিয়াতে থাকার জন্য মানুষ কতই না মেহনত করছে ও করে যাচ্ছে কিন্তু আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি অমুক ব্যক্তি আবে-হায়াত পান করে চিরঞ্জীব হয়ে আছে। দুনিয়া কখনো কারও বন্ধু হয় না। সে বড়ই স্বার্থপর। বড় বড় দুনিয়াদাররা দুনিয়াতে থাকার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করেছে। যেমন ফেরাউন, নমরুদ, হামান, কারুন ও সাদ্দাদ। সাদ্দাদ তো দুনিয়াতে থাকার জন্য বেহেশত পর্যন্ত নির্মাণ করেছিল। কিন্তু তারা দুনিয়াতে থাকতে পারেনি। যেতে হয়েছে পরকালে। হিসাব দিতে হবে আল্লাহর কাছে জীবনের প্রতিটি বিষয়ের। কেয়ামতের পূর্বে আবির্ভূত হবে ইয়াজুজু মাজুজ নামে অতি শক্তিশালী প্রাণী, যাদের মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা দুনিয়ার কারও থাকবে না। তারা একপর্যায়ে দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করে ধাম্ভিকতা প্রদর্শন করে বলবে, চল দুনিয়াবাসীকে তো আমরা খতম করেছি, এখন আকাশের বাসিন্দাদের খতম করলেই আমরা আবাদুল আবাদ দুনিয়াতে থাকতে পারব। কিন্তু আল্লাহতায়ালা ঘাড়ে সামান্য বিষাক্ত ফোঁড়া দ্বারা তাদের হালাক করে দিবেন। তাদেরও যেতে হবে পরকালে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, সাহাবারা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! কেয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাব?
তিনি বললেন, দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের মধ্যে কোনো বাধা থাকে? তারা বললেন, না। তিনি আরও বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাতে পূর্ণ চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো প্রকারের অসুবিধা হয়? তারা বললেন না, অতঃপর তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। এই দুটির কোনো একটিকে দেখতে তোমাদের যে পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেই দিন তোমাদের রবকে দেখতে সেই পরিমাণ অসুবিধাও হবে না। এরপর হুজুুর (সা.) বললেন, তখন আল্লাহতায়ালা কোনো এক বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন : হে অমুক! আমি কি তোমাকে মর্যাদা দান করিনি? আমি কি তোমাকে সর্দারি দান করিনি? আমি কি তোমাকে বিবি দান করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে অনুগত করে দেইনি? আমি কি তোমাকে এ সুযোগ করে দেইনি যে তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবে? এবং তাদের কাছ থেকে এক চুতর্থাংশ মাল ভোগ করবে? উত্তরে বান্দা বলবে হ্যাঁ? (আয় আমার পরওয়ারদেগার) অতঃপর হুজুর (সা.) বললেন, তখন আল্লাহতায়ালা বান্দাকে বলবেন : আচ্ছা বল দেখি; তোমার কি এ ধারণা ছিল যে, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে? বান্দা বলবে না। এবার আল্লাহতায়ালা বলবেন : তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে ছিলে, আজ আমিও (পরকালে) অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব। অতঃপর আল্লাহতায়ালা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, সেও অনুরূপ বলবে। তারপর তৃতীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সে বলবে হে আমার পরওয়ারদেগার! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ইমান রেখেছি, নামাজ পড়েছি, রোজা রেখেছি এবং দান-সদকা করেছি।
মোটকথা, সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সম্মুখে তুলে ধরবে। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বললে, এখন এখানেই দাঁড়াও! এক্ষণি তোমার ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করছি, এ কথা শুনে বান্দা মনে মনে চিন্তা করবে এমন কে আছে যে এখানে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে? অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হবে এবং তার রানকে বলা হবে তুমি বল, তখন তার রান, হাড়, মাংস প্রভৃতি এক একটি করে বলে ফেলবে তারা যা যা করেছিল। তার মুখে মোহর মেরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে এ জন্য সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে যেন সেই বান্দা কোনো ওজর আপত্তি পেশ করতে না পারে। মূলত এখানে এ তৃতীয় যেই ব্যক্তির কথা আলোচনা করা হলো সে হলো একজন মুনাফিক। এ কারণেই আল্লাহ তার ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হবেন। (মুসলিম শরিফ)। বস্তুত পরকালে মহান রাব্বুল আলামিন এভাবে বান্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন ও পুরোপুরি হিসাব নেবেন ও বিচারকার্য সমাধা করবেন। প্রিয় পাঠক! আখেরাতে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সামানা বা পাথেয় তৈরি অবশ্যই করতে হবে। যিনি পূর্ণ সামানা তৈরি করতে পেরেছেন তিনিই প্রকৃত বুদ্ধিমান।
পক্ষান্তরে যিনি হেলায় খেলায় মহামূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন মূলত তিনিই নির্বোধ। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে পরকালমুখী করুন এবং পরকালের সামানা তৈরি করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।
বি/পি/এন