এম ডি বাবুল, চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: রাঙ্গুনিয়া সেই চাঞ্চল্যকর এনজিও কর্মী হত্যার আসামি র্যাব এর যৌথ অভিযানে গ্রেফতার নিহত ভিকটিম চম্পা চাকমা (২৮) বেসরকারি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ এর রাঙ্গুনিয়া ব্রাঞ্চের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আসামী মোঃ এনামুল হক গত ২০ এপ্রিল ২০২২ইং তারিখে উক্ত এনজিও হতে তার মায়ের নামে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা এবং তার বোনের নামে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা লোন গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এনামুল তার মায়ের লোনের ৪০ কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করলেও তার বোনের নামে গ্রহণকৃত লোনের ০৬টি কিস্তির টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করছিল না যেগুলো প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ভিকটিম এনামুলকে বারংবার তাগিদ দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।
গত ০৫ মার্চ ২০২৩ইং তারিখ রাত আনুমানিক ২০২০ ঘটিকায় ভিকটিম চম্পা চাকমা এবং তার সহকর্মী একত্রে অফিস হতে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে রাঙ্গুনিয়া থানাধীন ধামরাইহাট এলাকায় তাদের সাথে এনামুল এর দেখা হলে তাদের মধ্যে লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ সংক্রান্তে কথা কাটাকাটি হয়। লোনের কিস্তির টাকার জন্য বারংবার তাগিদ দেওয়ায় এনামুল ভিকটিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে এনামুল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম চম্পা চাকমার গলায় শ্বাসনালীতে আঘাত করে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ভিকটিম চম্পা চাকমার অফিসের সহকর্মীরা এবং আশেপাশের লোকজন ভিকটিমকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভগ্নিপতি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং- ০৪, তারিখ ০৬ মার্চ ২০২২ইং, ধারা-৩০২ পেনাল কোড-১৮৬০।
বর্ণিত নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি রাঙ্গুনিয়াসহ সারাদেশে আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত নিরীহ নারী এনজিওকর্মীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে নৃশংস হত্যাকান্ডে রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ী আধিবাসী জনগোষ্ঠী হত্যা মামলার প্রধান আসামাীকে গ্রেফতারের জন্য অনেকগুলো মানববন্ধন করে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের এজাহারনামীয় একমাত্র আসামী এনামুলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী ও ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
গোয়েন্দা নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উক্ত হত্যা মামলার একমাত্র আসামী এনামুল আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর থানার আসামপুর এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ও র্যাব-৯, সিলেট এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ০৩ মার্চ ২০২৩ইং তারিখ আনুমানিক ২২০০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ এনামুল হক এনাম, পিতা-মোঃ নুরুজ্জামান, সাং-উত্তর পারুয়া, থানা-রাঙ্গুনিয়া, জেলা-চট্টগ্রাম‘কে আটক করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকার করে, সে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এবং এজাহারনামীয় একমাত্র আসামী।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল খুন করার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। কারন তার মা ও বোন বেসরকারি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ নামক মহিলা এনজিও হতে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেয় যার ৩০ হাজার টাকার মত বাকি ছিল, যেটা তোলার জন্য এনজিও হতে ৮ জন লোক তার বোনের বাসায় যেতে চেয়েছিল, পুরো টাকা তারা নিয়েই আসবে ও তার ভগ্নিপতি যেহেতু বিদেশে থাকে, তাই তার মান সম্মান যাবে এই ভেবে, তার ভাষ্যমতে, সে হাতে চাকু নিয়ে সন্ধ্যা ১৯৩০ ঘটিকায় প্রথমে চম্পাকে চাকু দেখিয়ে হুমকি দেয় এবং একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ছুরিকাঘাত করে। সে এ কাজের পরিকল্পনায় আগেই চাকু সংগ্রহ করে রাখে। হত্যার পর পাহাড়ি বনে একরাত, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, চকবাজার এলাকা, ঢাকার পোস্তাগালা এবং সর্বশেষ সিলেটের জৈন্তাপুরে দৈনিক ২০০ টাকা বেতনে হোটেলে কাজ নেয় যেখান হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।