মারুফ সরকার ,বিনোদন প্রতিনিধি : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে প্রতিবার উত্তাপ থাকলেও এবারের নির্বাচনের উত্তাপ আগের সব নির্বাচনকে ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তারকাদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। কে কাকে দোষ দিয়ে তারকাদের মধ্যে নিজেদের ইমেজ ভালো করবে এ নিয়ে শুরু হয়েছে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এমনকি একজন আরেকজনকে চোর বানাতেও ক্ষান্ত হচ্ছেন না। এ অবস্থায় নির্বাচনকে ঘিরে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেন বিস্তার লাভ করছে।
এতকিছু সত্ত্বেও আগামী ২৫ অক্টোবর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। তারকারাও এ নিয়ে উৎফুল্ল। একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘আশা করি সুষ্ঠুভাবেই আগামী ২৫ অক্টোবর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী সব কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা কাজ করছেন। নির্বাচনে যারাই জয়ী হোক তাদের চলচ্চিত্র উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।
সমিতির উন্নয়নে নয়, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শিল্পীদের সম্মানজনক অবস্থা নিয়ে নির্বাচিতদের ভাবতে হবে। আমাদের প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন। আসলে যাদের সাহস আছে তারাই তো প্রতিনিধিত্ব করে, তারাই নির্বাচনে আসেন। যারা শিল্পীদের স্বার্থ নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াবেন, চলচ্চিত্রের নতুন গতি তৈরি করবেন তারাই যেন নির্বাচিত হন।
নায়ক আলীরাজ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে চারদিকে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি শুটিংয়ের কাজে কিছুদিন ঢাকার বাইরে আছি। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে মনে হয় এবারের নির্বাচনটা একটু ভিন্ন রকমের। এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়া দরকার যারা দৌড়ঝাঁপ করতে পারবে, শিল্পীদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবেন। নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে শিল্পীদের স্বার্থ নিয়ে ভাববেন। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন।’
নায়িকা অঞ্জনা সুলতানা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হতেই হবে এবং তা আগামী ২৫ অক্টোবর হবে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করবেন। তবে নির্বাচনে মৌসুমীর বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা নির্বাচনে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন একসময় তারাই হুট করে সরে গেলেন। তাদের জন্যই তো তিনি প্যানেল করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এটা বড় অন্যায়। তারপরও মৌসুমী একা লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এজন্য মৌসুমীকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই তার সাহসিকতার জন্য।
যারা অসহায় শিল্পীদের পাশে থাকবেন, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তৎপর থাকবেন তাদেরই নির্বাচনে জয়ী হওয়া উচিত। আমি নিজেও এবার কার্যনির্বাহী সদস্যপদে নির্বাচন করছি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু কাজ করতে হবে সবাইকে। আমি বরাবরই শিল্পীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দুস্থ শিল্পীদের জন্য সমিতিতে এক লাখ টাকাও দিয়েছি। নির্বাচনে পরাজিত হলেও শিল্পীদের পাশে থাকব।’
আইরিন সুলতানা বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এবার চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোট দেব। আমার অভিনীত দশটি ছবি মুক্তি পেলেও এবারই সমিতির তালিকাভুক্ত সদস্য হয়েছি। এজন্য ভালো লাগাটা অনেক বেশি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। আশা করছি সুন্দর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন প্রতিনিধিদের বিজয়ী হওয়ার আশা করছি যারা প্রকৃতই যোগ্য ব্যক্তি। এক কথায় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করবেন।’
বিপাশা কবির বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচনে যারাই নেতৃত্বে আসবেন তাদের কাছে একটিই চাওয়া, চলচ্চিত্রাঙ্গনকে বর্তমান অবস্থা থেকে বের করতে হবে। সমিতির উন্নয়ন নয়, সিনেমার উন্নয়ন করতে হবে। তাহলেই এই শিল্প তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকেই ভোট দেব, যে শিল্পীদের বিপদে-আপদে পাশে থাকবে। অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াবে। চিন্তা-ভাবনা করেই ভোট দেওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
সাধারণত শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সরগরম হয়ে ওঠে। পোস্টারে ছেয়ে যায় এফডিসি। যার যার মতো প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রচার চালাতে থাকে। এবার সেসব কম দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া সমিতির ২১টি পদের মধ্যে নির্বাচন হবে ১৮টি পদের। বিপরীতে প্রার্থী না থাকায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া আগেই তিন প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তিন পদে নির্বাচিত হয়েছেন সুব্রত (সাংগঠনিক সম্পাদক), জ্যাকি আলমগীর (দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক) এবং ফরহাদ (কোষাধ্যক্ষ)।
জানা গেছে, ১৮ পদের জন্য এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ২৭ জন প্রার্থী। সভাপতি পদে লড়বেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও মিশা সওদাগর। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদেই একমাত্র শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের বিপক্ষে লড়বেন ইলিয়াস কোবরা।
নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত হয়েছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। এই প্যানেল থেকে মিসা সওদাগর সভাপতি পদে ও জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন। এছাড়া এই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে লড়ছেন মাসুম পারভেজ রুবেল, মনোয়ার হোসেন ডিপজল। মিশা-জায়েদ প্যানেলে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আরমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে মামুনুন হাসান ইমন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে জ্যাকি আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ পদে ফরহাদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সুব্রত লড়াই করছেন।
মিশা-জায়েদ প্যানেল কার্যনির্বাহী সদস্যপদে আছেন অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, আলি রাজ, বাপ্পারাজ, আফজাল শরীফ, মারুফ, আসিফ ইকবাল, আলেকজান্ডার বো, জেসমিন, জয় চৌধুরী। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাংকোপাঞ্জা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন ডন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ইমনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নূর মোহাম্মদ খালেদ আহমেদ। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শামীম খান, মারুফ আকিব, রোঞ্জিতা, নাসরিন।
মিশা-জায়েদের প্যানেল পক্ষ থেকে ফেসবুকে তাদের পোস্টার প্রকাশ করে প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে মৌসুমী ও অন্যদের কোনো পোস্টার এখনো দেখা যাচ্ছে না।