শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসা দেশে গরু জবাই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছেন। সম্প্রতি পার্লামেন্টারি গ্রুপে আলোচনার পর এ প্রস্তাব দেন তিনি।
দলের পার্লামেন্টারি গ্রুপের বৈঠকে রাজাপাকসা এ প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, অনেকেই গরু জবাইয়ের বিরোধী, তাই এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। গ্রুপের সবাই তাকে সমর্থনও দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার মুখপাত্র ও মিডিয়া মন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকবেলাকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় মিডিয়াগুলো বলেছে, তিনি বলেছেন, রাজাপাকসা বলেছেন যে, তিনি আশা করছেন গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হবে এবং পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন যে কখন সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে।
সরকার জানিয়েছে যে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এক মাস দেরি হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য গরুর মাংস আমদানি করা হতে পারে।
সংখ্যাগরিষ্ঠদের তুষ্ট করা?
কিছু পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই এই সময়ে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে। রোর মিডিয়ার এডিটর ইন চিফ রোয়েল রেইমন্ড বলেন, ‘বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা এই পদক্ষেপের পক্ষে। কারণ সাংস্কৃতিক কারণে সিংহল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে গরুর মাংস খাওয়াকে অনুৎসাহিত করা হয়।’
রাজাপাকসার দল ক্ষমতাসীন শ্রীলংকা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) গত মাসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তাদের মূল সমর্থক গোষ্ঠিই হলো সিংহল বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
রেইমন্ড উল্লেখ করেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এমন সময় উত্থাপন করা হলো যখন এসএলপিপি’র এমপি ও ২০১৫ সালে নির্বাচনী সমাবেশে বিরোধী কর্মীকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত প্রেমালাল জয়াসেকারা শপথ নিলেন।
তিনি বলেন, ‘জয়াসেকারা শপথ নেয়ায় যে জনক্ষোভ উসকে উঠেছিল, গরু জবাই নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিয়ে সেটাকে কিছুটা প্রশমিত করা হলো। সে কারণে এখানে একটা মাত্রায় রাজনৈতিক হিসেব রয়েছে।’
গবাদি পশুকেন্দ্রিক রাজনীতি
গরু জবাই নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা এটাই প্রথম নয়। এই ধারণা বহু বছর ধরে বিরাজ করলেও এটা নিয়ে আইন করার কথা কোন সরকারই ভাবেনি। কারণ এর সাথে সামাজিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনার বিষয়টি জড়িত আছে।
এর মধ্যে প্রধান দিক হলো বৌদ্ধ-মুসলিম সম্পর্ক। গরু জবাইয়ের বিষয়টি তখনই সামনে আসে যখন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে।
২০১৩ সালের ২৬ জুন সিংহল রাভায়া সংগঠনের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কলম্বোতে বিক্ষোভ করেছিল। তারা সে সময় সারা দেশে গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিল।
শ্রীলংকার জনসংখ্যার মধ্যে ৭০ শতাংশই বৌদ্ধ এবং তাদের ধর্মে পশুহত্যা উপর বিধিনিষেধ থাকলেও তাদের একটা বড় অংশ গরুর মাংস খেয়ে থাকে। সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিস্টান এবং কিছু হিন্দুও গরুর মাংস খেয়ে থাকে।
সে কারণে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, গরু জবাই নিষিদ্ধের সাথে বৌদ্ধ ধর্মের সম্পর্ক নেই, বরং এখানে বৈষম্য রয়েছে।
বৌদ্ধদের আলাদাভাবে তুলে ধরার জন্য এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য গরু জবাইয়ের বিষয়টি প্রায়ই উত্থাপন করা হয়।
যুদ্ধ পরবর্তী শ্রীলংকায় হালাল-বিরোধী ও গরু জবাই বিরোধী প্রচারণার উপর পরিচালিত এক গবেষণায় লেখক মোহাম্মদ ইউসুফ ও আথামবাওয়া সারজুন দেখেছেন যে, বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং তাদের ‘তীব্র সংখ্যালঘু-বিরোধী ঘৃণা’র কারণে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্মীয় আচার পালন করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।’
BD/P