ডেস্ক রিপোর্টঃ আমাদের মুখ থেকে অন্ত্র অবধি গোটা জায়গায়ই সক্রিয় থাকে অনেক এনজাইম, হরমোন আর রাসায়নিক। খাবার চিবানো বা গেলার পর তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে অণু-পরমাণুতে ভেঙে অবশেষে রক্তে মেশানোই এসব রাসায়নিকের কাজ। এই কাজটা ঠিকমতো না করতে পারলে খাবার হজম হয় না, অর্থাৎ খাবারের কোনো পুষ্টি উপাদান রক্তে মেশে না। ফলে ধীরে ধীরে দেহে নানা ধরনের উপাদানের অভাব দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা, ভিটামিন ও খনিজের অভাব, আমিষের অভাব, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি হলো এর পরিণতি। হজমজনিত এই সব সমস্যার নাম ম্যালঅ্যাবসরপসন সিনড্রোম।
নানা কারণে এই ম্যালঅ্যাবসরপসন হতে পারে। যেহেতু প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় হজমের মূল এনজাইমগুলো নিঃসরণ করে, তাই প্যানিক্রিয়াসের প্রদাহ, পাথর বা টিউমারে হজমশক্তি রহিত হয়। কারও কারও দেহে বিশেষ এনজাইমের কার্যকারিতা কম থাকতে পারে, যেমন ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স যাঁদের আছে, তাঁরা দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার হজম করতে পারেন না। যদি কোনো কারণে পাকস্থলী বা অন্ত্রের একটি অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া হয়, তবে হজমশক্তি কমে যাবে। আবার অন্ত্রে নানা ধরনের সংক্রমণ হলেও এমন সমস্যা হতে পারে। সিলিয়াক ডিজিজ নামক রোগে গ্লুটেন আছে, এমন খাবারের বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ও সে খাবার হজম হয় না।
যেকোনো ডায়রিয়া বা বদহজম মানেই কিন্তু ম্যালঅ্যাবসরপসন নয়। সাময়িকভাবে নানা কারণে (সংক্রমণ বা অ্যালার্জি) বদহজম হতেই পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ডায়রিয়া, পিচ্ছিল দুর্গন্ধযুক্ত মল, মলত্যাগের পর যা টয়লেট ফ্ল্যাশ করার পরও চলে যায় না, সেই সঙ্গে দিনে দিনে ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, মুখে-জিবে বা ঠোঁটের কোণে ঘা, চুল পড়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া—এই সব হলো ম্যালঅ্যাবসরপসনের লক্ষণ। শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, আমিষের অভাবে দেহে পানি জমা ও বারবার সংক্রমণে ভোগাও হতে পারে উপসর্গ। ম্যালঅ্যাবসরপসন বা হজমের সমস্যা মনে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করতে হবে ও চিকিৎসা নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। কখনো কখনো কিছু খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আধুনিক ইমিউনো মডুলেটর দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজের অভাব পূরণ করতে সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়।