জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ অপরাধ কর্মে বাধা দেয়া ও পাওনা টাকা চাওয়ায় সৈয়দপুরে আপন খালাতো ভাইকে ষড়যন্ত্র করে হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ মিলেছে।
গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ নামে ওই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন অপর খালাতো ভাই শাহা আলম। শহরের কুন্দল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই অভিযোগ তুলে ধরে শাহা আলম বলেন, মো. মাসুদ আলী আমার আপন খালাতো ভাই ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী আর মাসুদ আলী বেকার। তবে মাসুদ আলীর স্ত্রী সৈয়দপুরের জনপ্রিয় গাইনী চিকিৎসক। ফলে স্ত্রীর টাকা দিয়ে সে সুদের ব্যবসা চালিয়ে অবৈধ আয়ের সুবাদে মাসুদ আলী চেইন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় নেশার টাকা জোগাতে গিয়ে ধারদেনাও করে। আর ওই নেশার কারণেই মাদক কেনার জন্য আন্তঃজেলা মোটর সাইকেল চোর চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়।
এ অবস্থায় আমাদের পারিবারিক ও তার স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে তাকে অপরাধ কর্ম থেকে বিরত হতে বাধা দেই। কিন্তু সে আমার কথায় কোন কর্ণপাত না করে নিজের মতো করে চলতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমাকে ধলাগাছ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে চাকুরী দেয়ার নামে আমার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা নেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সে আমার চাকুরির সুরাহা করতে না পারায় গত আগস্ট মাসে আমি তাঁর কাছে আমার দেয়া টাকা ফেরত চাই। এতে সে বিভিন্ন টানবাহানা করে সময় ক্ষেপন করে। পরে আমি টাকা ফেরত পেতে বেশি চাপ দিলে সে আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে বলে যে, আমার শ্যালক পুলিশ অফিসার। ইশারা দিলেই তোমার নাম পুলিশের খাতায় চলে যাবে। তার এমন কথায় আমি অবাক হই। এরপর থেকে তার সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর সে আমার মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে লাল রংয়ের ইয়ামাহা ফিজার ১৫০ সিসির একটি মোটর সাইকেলের ছবি পাঠিয়ে বলে যে, এই গাড়িটি যশোর সদর থানার নিলামে বিক্রির গাড়ী। তুমি গাড়িটি কিনলে আমি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় আমার পুলিশ বন্ধু জাকির হোসেন মিলনের মাধ্যমে কিনে দিতে পারবো। আমি তার কথা বিশ্বাস করে মোটর সাইকেলটি কিনতে চাই। পরে সে আমাকে জানায় এখনই মিলনকে ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে। তার কথায় আমি আমার মোবাইলের নগদ একাউন্ট থেকে ওইদিনই মিলনকে ২০ হাজার টাকা পাঠাই। পরের দিন সে জানায় মোটরসাইকেল এস.আর পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে দিনাজপুর অফিসে চলে এসেছে। এ অবস্থায় গত ১১ সেপ্টেস্বর মোটরসাইকেল আনতে দিনাজপুরে যাই। সেখানে গিয়ে মিলনকে না পেয়ে বিষয়টি মাসুদকে জানালে সে বলে ওখানে মিলনের লোক নুর আলমের কাছে টাকা দিলে গাড়িটি এসআর পার্সেল থেকে ছাড়িয়ে দিবে। এসময় গাড়ির কাগজপত্র চাইলে সে জানায় কাগজপত্র পরে ঠিক করে দেওয়া হবে। পরে টাকা পরিশোধ করে আমি মোটরসাইকেলটি সৈয়দপুরে নিয়ে আসি। আমি অনলাইনে গাড়িটির কাগজপত্র যাচাই করলে গাড়ির মুল মালিক সাভার উপজেলার আশুলিয়া কলতাসুতি এলাকার জহিরুল ইসলামের কাছে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ চলে যায়। ওই ম্যাসেজের সুত্র ধরে গত ১২ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া থেকে গাড়ীর মূল মালিক সেখানকার থানা পুলিশের সহায়তায় সৈয়দপুর আসে। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ আমাকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে আটক করে সেখানে নিয়ে যায়।
এ সংক্রান্ত মামলায় মাসখানেক হাজতবাস শেষে সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হই। সে জানায়, হাজতে থাকা অবস্থায় জানতে পারি মাসুদের কাছে আমার পাওনা টাকা চাওয়া ও তার মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় মাসুদ ও তার বন্ধু জাকির হোসেন মিলনের সহযোগিতায় আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে ওই চোরাই মোটরসাইকেল খরিদ করিয়ে মোটর সাইকেল চুরির মামলায় ফাঁসিয়ে আমাকে হয়রানি করে।
তিনি আরো বলেন, এতে আমি মানসিক, সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। তিনি ষড়যন্ত্রকারী মাসুদ ও মিলনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।