জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ মসজিদের বহুতল ভবন নির্মান কাজ করাকালে দেয়াল চাপা পড়ে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পিলারের পাইলিংয়ের জন্য গর্ত করার সময় সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। অত্যন্ত ঝু্ঁকিপূর্ণ কাজে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রাণহানি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের সাহেবপাড়া রেলওয়ে কারখানার ক্যান্টিনের পাশে সংঘটিত দূর্ঘটনায় নিহত নির্মান শ্রমিকের নাম শফিকুল ইসলাম (৪০)। তিনি উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পোড়ারহাট বাজার সংলগ্ন তেলীপাড়ার রশিদের বড় ছেলে।
নিহতের ছোটভাই রফিকুল ইসলামও এই কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিল। সে জানায়, আমরা পাশেই ঈদগাহ মাঠে রড কাটার কাজ করছিলাম আর ভাই পিলারের গর্ত করছিল। হঠাৎ গর্তের উপরের পুরাতন দেয়াল ভেঙে পড়ে। পাশের অন্য দুইজন শ্রমিক লাফিয়ে সরতে পারলেও ভাই পুরোপুরি দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে।
ভেঙে পড়ার শব্দ আর শ্রমিকদের চিৎকার শুনে আমরা ছুটে গিয়ে দেখি ভাইয়ের উপর দেয়ালের সব ইট। আমরা চেষ্টা করেও যখন দেয়ালের বড় বড় চাই সরাতে ব্যর্থ হই। পরে পথচারীসহ সকলে মিলে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মাথায় ও পিঠে আঘাত লাগায় নাক-মুখ দিয়ে ব্যাপকভাবে রক্ত বেড়িয়ে আসছিল। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই গর্ত করা হয়েছে। এতে দেয়ালের গোড়া মাটিশুন্য হয়ে আগলা হওয়ায় ঝু্ঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। তাছাড়া দুইদিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় দেয়ালটি ভারি ও ভঙ্গুর অবস্থা হয়েছিল। একারণেই সেখানে কাজ করার সময় দেয়াল আটকে রাখতে কোন ঠ্যাক দেয়া বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একারণে আজ কাজ করার সময় মাটিতে আঘাত করায় সহসাই দেয়ালটি ভেঙে পড়েছে।
জানা যায়, রেলওয়ে কারখানার প্রধান গেটের সামনে একতলা বিশিষ্ট বায়তুল মামুর জামে মসজিদ ভেঙ্গে বহুতল ভবন করতে নির্মাণকাজ চলছে। সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর এলাকার সামসুল হক নামে ঠিকাদার এই কাজ করছেন। তাঁর ছোট ভাই হাসানুজ্জামান বলেন, এটা একটা দূর্ঘটনা। কাজ করতে এমন হতেই পারে।
তিনি বলেন, সমঝোতায় ২-৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তবে আইন আদালত করলে নিয়মানুযায়ী মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকাই পাবে। তাই নিহতের বাবা স্বাক্ষর করেই লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু জানিনা কার বৃুদ্ধিতে তারা লাশ আবার হাসপাতালে ফেরত আনে। এখন পুলিশ লাশ থানায় নিয়ে গেছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও পৌর পরিষদের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুর আলম বলেন, শুনেছি দেয়াল পড়ে একজন মারা গেছে। নিরাপত্তার ঘাটতিজনিত কারণে দূর্ঘটনা হয়ে থাকলে সেজন্য ঠিকাদার দায়ী। শ্রমিকের পরিবার আর ঠিকাদার বিষয়টা দেখবে। এইক্ষেত্রে আমাদের কিছুই নাই।
পরিবারের লোকজন জানান, নিহত শফিকুল ইসলাম পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর স্ত্রীসহ ছোট দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। সকালবেলা কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আমরা তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়ল।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিকালে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নীলফামারী জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।