জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি করেছেন। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের উপজেলার কামারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন।

অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েকশ গাড়ি আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। এতে ৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনকে নারী কেলেঙ্কারীর কারণে তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৬ আগষ্ট একটি পক্ষকে বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষককে চেয়ারে বসান। আবারও যোগদান করার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টিউশিন ফি আদায় করছেন।

তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার বিষয়ে ঠিকমতো তদারকি করেন না। এত বড় বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নেই। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেন তিনি। এ জন্য আমরা তাকে বরখাস্তের দাবি জানিয়ে গত ৭ অক্টোবর রাস্তা অবরোধ করি ৷ ওই সময় তাকে বরখাস্তের কথা বললেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। এ কারণেই আমরা আজ পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করেছি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সেখানে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী। তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আনোয়ারুল ইসলাম,ইউনিয়ন জামায়াত নেতা আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম ও কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ আলাল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোতাহ হোসেন, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ফইম উদ্দিন, উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ফোরামের সভাপতি হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল ফারুক একাডেমির প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, লক্ষ্মণপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম রেজা, কামারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানসহ অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ, সাংবাদিকবৃন্দ। আলোচনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। প্রায় ৪ ঘন্টা পর সড়কে আটকে পড়া যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয় ৷
এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয় সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল ইসলামকে ৷

প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে আমাকে সামায়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছিল। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েই আবারও যোগদান করি। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। তারা আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারাই ইন্ধন দিয়ে শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়কে নামিয়েছে। আমার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত করে দেখুক।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমানিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে