নীলফামারী সৈয়দপুরে পাওনা টাকা চাওয়ায় হত্যার হুমকি দেয়ায় সাবেক এমপি’র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এক থাই ফিটিংস মিস্ত্রি। মামলা করার পর পুলিশ দেরীতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ায় মামলার কার্যক্রম যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনি মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি ন্যায্য প্রাপ্য টাকা না পেয়ে আর্থিক দৈন্যতায় ব্যবসা গুটিয়ে দূর্বিসহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।
এমনই দূরাবস্থায় সহযোগীতার আশায় মিডিয়ার শরণাপন্ন হয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী আফজাল হোসেন মনু। তিনি ৩১ জুলাই শনিবার সকাল ১১ টায় উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর কলেজ সংলগ্ন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এতে তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, আমি একজন থাই ফিটিংস মিস্ত্রি। দীর্ঘ দিন থেকে ‘সৈয়দপুর থাই ঘর’ নামের এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে থাই গ্লাস, ফ্রেম, এলুমিনিয়াম ও রড বার, টাইলস্ সহ বাড়ি নির্মাণের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ বিক্রি এবং ফিটিংস ও রংয়ের কাজ করি। নিজে মিস্ত্রি হয়ে সহকারী মিস্ত্রি ও লেবার সহ কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ করেও থাকি।
এমতাবস্থায় গত ২০১৮ সালের ১৫ জুন আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক হুইপ, বর্তমানে সৈয়দপুর বিএনপি’র নেতা আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী আমার দোকানে আসেন।
এসময় সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলী জামবাড়ী এলাকার মোঃ ইস্রাফিল ও জোনাব আলী আমার দোকানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে শওকত চৌধুরী তাঁর বাড়ির জন্য থাই গ্লাস, ফ্রেম ও টাইলস্ এবং রং করার প্রয়োজনীয় মালামালসহ সমুদয় কাজের কন্টাক্ট করেন।
আমি তাঁর কথামত যাবতীয় মালামাল সরবরাহ করি এবং লেবার নিয়ে নিজে কাজ করে দেই। পরে মালামালের দাম ও কাজের মজুরি বাবদ মোট ১১ লাখ টাকা বিল প্রদান করলে শওকত চৌধুরী ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এক মাসের মধ্যে দিবেন বলে জানান। তার কথামত একমাস পর টাকা চাইলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আজকাল করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।
এভাবে প্রায় একবছর পেরিয়ে গেলেও তিনি টাকা না দেয়ায় ২০১৯ সালের ৩ জুন দুপুর ১২ টায় শওকত চৌধুরীর মোবাইলে কল দিলে তিনি অকথ্য গালিগালাজ করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ফলে বাধ্য হয়ে বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করতে থানায় গেলে পুলিশ জিডি নিতে পারবেনা বলে জানায় এবং টাকা আদায়ে আদালতে মামলা করার জন্য বলেন।
এতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি বিকাল ৪ টায় ইস্রাফিল ও জোনাব আলীকে নিয়ে শওকত চৌধুরীর বাড়িতে যাই। এসময় তিনি পাওনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে আর যোগাযোগ না করার জন্য বলেন। এতে প্রতিবাদ করলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং একপ্রকার জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নীলফামারী বিজ্ঞ আমলী আদালতে মামলা দায়ের করি।
আমি ন্যায্য পাওনা না পেয়ে চরমভাবে বিপদে পড়েছি। একদিকে অর্থাভাবে ব্যবসা গুটিয়ে দেয়ার মত অবস্থায় উপনীত হয়েছি। পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে করোনাকালীন দূরাবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। এরসাথে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি ধামকি প্রদান অব্যাহত থাকায় দূর্বিসহ অসহায়ত্বে দিনাতিপাত করছি। এমতাবস্থায় মিডিয়ার সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আতাউর রহমান মুঠোফোনে জানান, মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।