স্বাভাবিকভাবে তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন মৌসুম নয়, তারপরও গোপালগঞ্জে বিলের মাছের ঘেরের মাচায় ঝুলছে তরমুজ।গাছে ঝুলে থাকা তরমুজগুলো দূর থেকে লাউ বা কুমড়া মনে হয়। কাছে গেলে বোঝা যায়, মাছের ঘেরের মাচায় ঝুলছে তরমুজ। ঘেরের মাচায় অসময়ের এ তরমুজ কৃষককে আর্থিক সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় আসময়ের তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন, এ বছর কোটালীপাড়া উপজেলায় ৯ হেক্টরে , গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪ হেক্টরে, মুকসুদপুর উপজেলায় ০.৭৫ হেক্টরে, কাশিয়ানী উপজেলায় ০.২৫ হেক্টরে ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ০.৫ হেক্টরে অসময়ের তরমুজ আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় মোট ১৪.৫ হেক্টরে অসময়ের তরমুজ আবাদ হয়। প্রতি হেক্টরে এ জাতের তরমুজ ৪৫ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। সে হিসেবে এ বছর এ জেলায় ৬৫২.৫০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজার দর ৩ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি, কলাবাড়ি, কুশলা, হিরণ, রাধাগঞ্জ, সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের পুকুরের আইলে গোড়া পদ্ধতিতে ২৫০ জন কৃষক ৯ হেক্টর জমিতে অসময়ের তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। এখন তারা তরমুজ সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি তরমুজ তারা গড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ মৌসুমে কোটালীপাড়ার কৃষক কমপক্ষে ২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অসময়ের তরমুজ বিক্রি করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, অসময়ের তরমুজ স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন একটি ফসল। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই এ তরমুজের ফলন পাওয়া যায়। মিষ্টি ,রসালো ও খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে এ তরমুজের চাহিদা খুব বেশি। কৃষক বাড়তি দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। পুকুরের আইলে সবজি চাষ করলে কৃষক প্রতি কেজি সবজি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। সবজির পরিবর্তে তরমুজ চাষ করে কৃষক প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকী করণ করতে চাই। তাই কৃষককে দিয়ে উচ্চ মূল্যের ফসল ফলাতে আগ্রহী করে তুলছি। এভাবে কৃষকের আয় আমরা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত সরকার বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা বিল বেষ্টিত একটি উপজেলা। এ উপজেলায় পুকুরে মাছ ও ধান চাষ করা হয়। কৃষক পুকুরের আইলে সারা বছর শাক, সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করেন। এ বছর কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে পুকুরের আইলে গোড়া পদ্ধতিতে অসময়ের ব্লাক সুইটসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে। এখান থেকে ক্ষুদ্র চাষি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তরমুজ তাদের একটি বড় আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। তাদের দেখাদেখি অনেকেই আগামীতে লাভজনক অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের কৃষক মৃত্যুঞ্জয় পান্ডে বলেন, ৮ বিঘা পুকুরের ৩ বিঘা পাড়ে তরমুজ চাষ করেছিলাম। তরমুজের বাম্পার ফলন পেয়েছি। বিঘা (৫২ শাতাংশের ) প্রতি আমি তরমুজের ১৫০ মণ ফলন পেয়েছি। ৩ বিঘায় ৪৫০ মণ তরমুজ ফলিয়েছি। শাক, সবজির তুলনায় তরমুজের ফলন বেশি। শাক-সবজি ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারি। কিন্তু প্রতিকেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ৩ বিঘায় তরমুজ চাষে সড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। লাভজনক তরমুজ চাষ দেখে অনেকেই আগামীতে তরমুজ চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
একই গ্রামের কৃষক প্রদীপ হালদার বলেন, ৫ বিঘার পুকুরের ২ বিঘা আইলে তরমুজ চাষ করে খরচ বাদে ৩ লাখ টাকা ঘরে তুলেছি। তরমুজ চাষ অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় লাভ বেশি। কিন্তু অসময়ের তরমুজের একটু বেশি পরিচর্যা ও যত্ন নিতে হয়। তা হলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।
একই গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত হালদার বলেন, তরমুজের ভালো ফলন ও দাম পেয়েছি। আমি আমার ১০ বিঘার পুকুরের আইলে ৪ বিঘায় তরমুজের চাষ করে অন্তত ১০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি।
পুকুরের আইলে অসময়ের তরমুজ আবাদ বৃদ্ধি করে কৃষক অর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবেন। জেলাবাসীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে এ তরমুজ অবদান রাখবে। এতে জেলার অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে এমনটা প্রত্যাশা করছে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
BSS