ডেস্ক রিপোর্টঃ জহিরুল ইসলাম। সারাজীবন ধরে পরের জমিতে কামলা খেটেছেন। দিন এনে দিন খেয়েছেন। তাও দুবেলা। কোন সঞ্চয় করতে পারেননি। বরগুনার আমতলী উপজেলার কালিবাড়িতে তার গ্রাম। ভেবেছিলেন জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে। কিন্তু তার সে দুর্দিন আর নেই। ঘুচে গেছে। সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বদলে দিয়েছে তার জীবন।

প্রকল্পের অধীনে গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হয়েছেন জহিরুল। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ শুরু করেন। গরু পালন করেন। এছাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সঞ্চয় জমা করে এককালীন ১২ হাজার টাকাও পেয়েছেন তিনি। এভাবে জহিরুল স্বল্প পুঁজি গড়ে তোলেন। সবজি ও গরু বিক্রি করে ওই পুঁজিকে ক্রমান্বয়ে আরো বড়ো করেন। এখন জহিরুল আর কামলা খাটেন না। জহিরুল স্বাবলম্বী। প্রকল্পের উদ্যোগ বদলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা।

কালিবাড়ী গ্রাম উন্নয়ন সমিতির আরেক সুুুুবিধাভোগী সদস্যা হালিমা বেগম। ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে তার জীবন কাটছিল। ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় আর্থিক অনুদান নিয়ে তিনি একটি গাভী, হাঁস-মুরগী পালন শুরু করেন। এতে তার আর্থিক অনটনতো দূর হয়েছেই, দুই ছেলেকেও স্কুলে পড়াতে পারছেন।
দেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ হাজার পরিবার দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের জীবনে দেখা দিয়েছে স্বস্তি আর শান্তি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য আগের মতো তাদের তাড়িত করে না। তারা এ প্রকল্পের আওতায় পেয়েছেন টিন, গাভী, হাঁস-মুরগী, গাছ ও সবজির চারা। আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি মিলেছে ক্ষুদ্র ঋণও। সঞ্চয়ের জন্য পেয়েছেন আর্থিক সুবিধা। ফলে তাদের আর্থিক দৈন্যতা ঘুচে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক ১০ উদ্যোগের একটি হচ্ছে, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। দেশের ৪৮৫টি উপজেলার ৪, ৫০৩ ইউনিয়নের ৪০, ৫২৭টি গ্রামে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সারাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এর সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায় অধিদপ্তর, বার্ড-কুমিল্লা, আরডি-বগুড়া, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। প্রকল্প এলাকার উপজেলাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। প্রকল্প সমন্বয়ে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

প্রকল্পটির লক্ষ্য দারিদ্র্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, স্থানীয় সম্পদ আহরন ও তার যথাযথ ব্যবহার, উন্নয়নমূলক ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রকল্প পরিচালক আকবর হোসেন বাসসকে জানান, দারিদ্র্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে এ পর্যন্ত মোট ৭৩, ৪৬১ টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত পরিবার (সদস্য) সংখ্যা ৩৫,১০,৫৪২ জন। তাদের জমাকৃত নিজস্ব সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্প এলাকায় স্বল্প আয়ের পরিবারের সংখ্যা ১৫ শতাংশ থেকে কমে এখন ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে স্বাবলম্বী পরিবারের সংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩১ শতাংশ হয়েছে।
আমতলীর উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কারী প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন, “বর্তমান সরকার দেশব্যাপী গ্রামাঞ্চলে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করেছে। আমতলী উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৩শ ৮০ টি দরিদ্র পরিবার ইতোমধ্যেই আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। আরো অনেকে সুবিধা পাবেন।”

সাতক্ষীরা জেলার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী জানান, জেলার ৭ টি উপজেলায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই প্রকল্প শুরু হয়। কিন্তু নতুন আঙ্গিকে এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১-১২ অর্থবছরে। মাত্র ৮ হাজার ৪০০ জন সদস্য নিয়ে জেলায় কাজ শুরু হলেও বর্তমানে জেলার ৭ উপজেলার ৮ থানায় ৭৮ টি ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৬৮ জনে। শুরুতে জেলায় মোট তহবিল ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫ টাকা। বর্তমানে মোট তহবিল ৯ কোটি ১ লাখ ৫ হাজার ৪২ টাকা। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ভবিষ্যতে সাতক্ষীরাসহ বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষ এর ব্যাপক সুফল পাবে।এদিকে মাগুরা জেলার পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এ প্রকল্প আজ একটি বিপ্লবে পরিনত হয়েছে।

এ প্রকল্পের ভিশন হচ্ছে নিজস্ব পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীবিকায়ানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন। তাদের দেয়া তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ আওতায় মাগুরা জেলার ৩৬ ইউনিয়নে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৬০০ টি সমিতির আওতায় ২৭ হাজার ৩০৯ জন উপকারভোগী রয়েছে। জেলায় এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি ৬ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। সুবিধাভোগীরা প্রত্যেকে মাসিক ২০০ টাকা হারে প্রায় ১১ কোটি টাকা সঞ্চয় জমা করেছেন। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি ৮০ লাখ ২৪ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রধিকারমূলক কর্মসূচি। মাগুরা জেলায় এই কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্প দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ভ’মিকা পালন করছে।

B/S/S/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে