ডেস্ক রিপোর্টঃ জীবন জীবিকার তাগিদে কেউবা পড়াশোনা, ব্যবসা বা ঘুরে বেড়াতে বিদেশে যেতে চায়। আর বিদেশে যেতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিসা পাওয়া। আর এই ভিসা পাওয়া যতটা সহজ আবার ততটাই কঠিন। পৃথিবীতে ১৯২টি স্বাধীন রাষ্ট্র আছে। আর এই স্বাধীন রাষ্ট্রের একেক রকম স্বাধীন নিয়ম-কানুন আছে। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ দেশ থেকে দেশান্তরিত হয়ে থাকে। আর এ জন্যই প্রয়োজন ভিসা বা এনডোর্সমেন্ট। আর এই ভিসা জটিলতাই আমাদের বড় সমস্যা। আমরা প্রায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ভিসার জন্য আবেদন করে থাকি। যেমন- ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, কনফারেন্স ভিসা, ইনভেস্টর ভিসা, ইমিগ্রান্ট ভিসা ইত্যাদি। এই ভিসা আবেদন করার পরই যত ঝামেলা। এই ডকুমেন্টস দেওয়া হয়নি, ওই ডকুমেন্টস দেওয়া হয়নি, এটা সেটা ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিশেষে সুন্দর পাসপোর্টকে পরান কেলেঙ্কারির মালা। এরপর অন্য আরো যত দেশে ভিসা আবেদন করেন; ততই রিফিউজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই আসুন আজকে জেনে নেই ভিসা কেন রিফিউজ হয়?
ভিসা হলো একটি দেশে প্রবেশের প্রবেশপত্র যা আপনাকে নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়। (Visa application is just a paper but it takes a lot of cares, understanding and a beautiful presentation you and your paper). ভিসার জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারে। ভিসা আবেদন করলেই যে আপনার ভিসা হয়ে যাবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। কোন কনসাল্টিং ফার্ম বা কোন ব্যক্তি ভিসার গ্যারান্টি দিতে পারে না বা পারবে না। তবে হ্যাঁ, ভিসার কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা বা রিকোয়ারমেন্টস পুরোপুরি করেই ভিসা পাওয়া যায়। আসুন নীতিমালা বা রিকোয়ারমেন্টস নিয়ে কিছু আলোচনা করি-
১. প্রথমত : ব্যবসা বা চাকরির বর্তমান অবস্থা
২. দ্বিতীয়ত : সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা
৩. তৃতীয়ত : ভ্রমনের উদ্দেশ্য
৪. চতুর্থত : সামজিক অবস্থান
ব্যবসা বা চাকরির বর্তমান অবস্থা
আপনি যখন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন করবেন, তখন একজন ভিসা অফিসার প্রথমেই কিছু
ব্যাপার এসেসমেন্ট করে থাকেন, তার মধ্যে আপনার বর্তমান অবস্থা (Current
Profession) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্যবসা অবস্থান বলতে বোঝায়, আপনার
কোম্পানির আয়তন (লিমিটেড/সত্ত্বাধিকারী), এমপোলয়ী সংখ্যা, অ্যানুয়াল
রেভিনিউ, ট্যাক্স, ভ্যাট ও রিটার্ন এবং আপডেট সব কাগজপত্র। আর চাকরির
অবস্থান বলতে বোঝায়, আপনার বর্তমান কোম্পানি, চাকরির ডেজিগনেশন, মাসিক
বেতন, স্যালারি রেঞ্জ, স্যালারি সিস্টেম মানে স্যালারি ইন ক্যাশ অথবা পেইড
বাই অ্যাকাউন্ট, পারসোনাল ট্যাক্স ও রিটার্ন পেপার ইত্যাদি।
সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা
ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবস্থা খুব গুরুত্ব বহন করে। আপনার ব্যাংক
স্টেটমেন্ট জানাবে আপনার ব্যাংকের লেনদেন কেমন এবং এবং আপনি কতটুকু রিচ
পারসন। শুধু ব্যাংক স্টেটমেন্টই নয়, এর পাশাপাশি আপনাকে আপনার অ্যাসেট,
প্রপার্টি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি, জমিজমার কাগজপত্রাদি সঙ্গে জমা দিতে হয়।
আপনার বৈবাহিক অবস্থা ও আপনার বাচ্চা-কাচ্চা অনেক ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার
জন্য পজেটিভ রেজাল্ট প্রদর্শন করে থাকে, কারণ এগুলোই আপনার নিজ দেশে ফিরে
আসার জন্য গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করে থাকে।
ভ্রমণের উদ্দেশ্য
আপনি কোন উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করবেন, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার
ভ্রমণের নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার
মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে)। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে লেটার
অব পারপাস, ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয় না। আপনি সব ডকুমেন্টস
দিয়েই আপনার প্রত্যাশিত অ্যাম্বাসিতে ফাইল জমা দিলেন। কিন্তু ভিসা অফিসার
বা ডকুমেন্ট অফিসার আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ক্লিয়ার কনসেপ্ট পেল না, সে
ক্ষেত্রে ভিসা না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
সামাজিক অবস্থান
আপনি কমিউনিটি বা লোকালিটিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তা প্রমাণ করে
আপনার মেম্বরশীপ সার্টিফিকেট। আপনি কোন কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে
জড়িত বা আপনার কেমন ব্যক্তিত্ব তা আমরা বুঝতে পারি আপনার মেম্বরশীপ
কাগজপত্রের মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আমরা গুরুত্ব দেই না কিন্তু
ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্ব বহন করে।
এসব কারণের বাইরেও অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, পজেটিভ ভেরিফিকেশন দিতে না পারা, কন্টাক্ট ইনফরমেশন ঠিক না থাকা, মিসপ্রেজেন্টেশন বা ডকুমেন্ট জালিয়াতি, ইনভাইটার মিস কন্টাক্ট, সাডেন কোনো ভিসার নিয়ম-কানুন পরিবর্তন ইত্যাদি।
পিবিএ/জেডআই