থরে থরে সাজানো কাচের বোতল। বোতলের ভেতর পানি। কোনোটা বঙ্গোপসাগরের, তো কোনোটা মর্মর সাগরের, কোনোটা পদ্মা, মেঘনা, যমুনার, তো কোনোটা টেমস বা টাফের।
প্রতিটি বোতলের গায়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় আছে নদী বা সাগরের নাম, পানি সরবরাহকারীর নাম, পানি সংগ্রহের স্থান ও তারিখ। অভাবনীয় এ সংগ্রহশালার অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ে। ‘লোকায়ন জীববৈচিত্র্য জাদুঘর’ নামে প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু নদ-নদীর পানিই নয়, সাত মহাসাগরের বালুও সংরক্ষিত আছে। আছে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের সন্নিকটে পূর্ব আকচা গ্রামে অবস্থান ‘লোকায়ন জীববৈচিত্র্য জাদুঘর’র। হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রায় ২৫ একরজুড়ে ২০০৬ সালে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহিদ উজ জামান।
‘অস্তিত্বের সন্ধানে, শিকড়ের টানে’ প্রতিষ্ঠিত লোকায়ন জীববৈচিত্র্য জাদুঘরে আছে পাঁচটি গ্যালারি। নদী গ্যালারি, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী গ্যালারি, তৃণমূল লোকজ গ্যালারি, ভাষা গ্যালারি ও মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি।
প্রায় এক হাজারের বেশি গাছ-গাছালিতে ভরা সবুজের আঙিনায় পাখির কলকাকলিতে মুখর এ জাদুঘরে এলে মনে বিরাজ করে এক অন্যরকম প্রশান্তি।
নদী গ্যালারি
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশটিকে মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে অসংখ্য নদ-নদী। মধ্যযুগে বাংলাদেশে এক হাজার ৩০০ নদী ছিল বলে বিভিন্ন নথিপত্রে পাওয়া যায়। বিগত কয়েকশ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে অনেক নদী হারিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বাংলাদেশে জীবিত নদ-নদীর সংখ্যা এখন ২৩০টি। প্রকৃতির ওপর মানুষের যথেচ্ছ অত্যাচারের কারণে আগামী কয়েক দশকে আরও বহু নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ এ দেশের জীবন ও প্রকৃতির বড় অংশই নদীকেন্দ্রিক।
নদীমাতৃক এ জনপদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নদীকেন্দ্রিক জীবন চিত্র পৌঁছে দিতেই সাজানো হয়েছে নদী গ্যালারি।
এ গ্যালারিতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, কীর্তনখোলা, রূপসা থেকে শুরু করে প্রায় ২০০ নদ-নদীর পানি আছে। যেসব নদ-নদীর অস্তিত্ব এখন নেই অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমন নদ-নদীর পানিও এখানে সংরক্ষিত আছে। তাছাড়া নদীভিত্তিক বিভিন্ন পেশা ও বৃত্তিনির্ভর উপকরণ, দেশের নদ-নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও এ সংক্রান্ত তথ্য, নৌকা, নদীভিত্তিক উৎসব নৌকাবাইচ, ভাটিয়ালি গান, বন্যা, চর, জলজ উদ্ভিদ, মৎস্য, বর্ষা ও পাখির বিভিন্ন তথ্য এ গ্যালারিতে উপস্থিত।
দেশের বাইরের নীল নদ, টেমস, টাফ নদীসহ আরও অনেক নদীর পানি আছে এ গ্যালারিতে। আছে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, আন্দামান সাগর, মর্মর সাগরেরও পানি।
জাদুঘরটিতে প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত, উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগর—এ পাঁচ মহাসমুদ্রের বালুও আছে।
জাদুঘরটি গড়ার অন্যতম লক্ষ্য, এখানে ঘুরতে এসে দর্শনার্থীরা যেন পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হন, যার মাধ্যমে খাল-বিল, নদী-নালা-জলাশয় রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন।
ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী গ্যালারি
বাংলাদেশের উত্তর জনপদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, বাসস্থান, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, পেশা, উৎসব ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের বিভিন্ন উপকরণে সমৃদ্ধ সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারি। নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের শিল্পকলা, ধর্ম, পেশা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপন সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও রয়েছে এ গ্যালারিতে।
গ্যালারির তথ্যসূত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক বহুমাত্রিক জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। বৈচিত্র্যময় সভ্যতা, সংস্কৃতি ঐতিহ্যের চারণভূমি বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও জাতির বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। ১৯৭৩ সালের আদমশুমারিতে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি। ১৯৮৪ সালের আদমশুমারিতে ২৪টি উপজাতি এবং মোট জনসংখ্যা ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৮ জন বলা হয়েছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে ২৯টি উপজাতির ১২ লাখ ৫ হাজার ৯৭৮ জন মানুষের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশে ২৭টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন বলা হয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে এ সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ১০ হাজার ১৬৯। আদমশুমারির ২০১১’র তথ্য মতে, সমতলের তথা উত্তরবঙ্গে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১২ জন, ওঁরাও ৮০ হাজার ৩৮৬, বর্মন ৫৩ হাজার ৭৯, কোচ ১৬ হাজার ৯০৬, মুভা ৩৮ হাজার ২১২ ও কোল ২ হাজার ৮৪৩ জন। যদিও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মতে বাংলাদেশে শুধু সাঁওতাল জনসংখ্যার সংখ্যাই পাঁচ লাখেরও বেশি।
সাঁওতাল ও ওঁরাওদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, বাসস্থান ও পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, পেশা, উৎসব সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের বিভিন্ন উপকরণ প্রদর্শনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমতালের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও এ গ্যালারিতে রয়েছে।
তৃণমূল লোকজ গ্যালারি
তৃণমূল লোকজ গ্যালারিতে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা, হাসি-কান্না ও বিনোদনের বিচিত্র উপকরণ। এখানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে—কৃষিজ উপকরণ, ভেষজ এবং সংস্কারযুক্ত চিকিৎসা উপকরণ, বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা, কাগজি নোট, অলংকার, গৃহস্থালি উপকরণ, বৈবাহিক উপকরণ ও মৃৎশিল্প। এছাড়া রয়েছে পালকি, গরুর গাড়ি, হাপড়, ঢেঁকির মতো বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ উপকরণ।
কৃষিজ উপকরণের মধ্যে রয়েছে—লাঙল, মই, ফলা, দা, কাস্তে, হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি, কোদাল, কুঠার, নিড়ানি, ডুলি, ঢেঁকি, ছাম-গাহিন, কুলা, জলা ও খুন্তি।
ভেষজ এবং সংস্কারযুক্ত চিকিৎসা উপকরণের মধ্যে রয়েছে—হামানদিস্তা, ওষুধ তৈরির পাথরের বাটি, তাবিজ, কবজ, মন্ত্রপড়া লাঠি, খাবনামা ও ফালনামা।
বিভিন্ন কাল ও সময়ের মুদ্রা এবং কাগজি নোটের মধ্যে রয়েছে—সুলতানি আমল, মোগল আমল, ইংরেজ আমল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা।
অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে—মাটি, দস্তা ও রুপার তৈরি বিভিন্ন কাল ও সময়ের অলঙ্কার।
ধর্মীয় বা মাঙ্গলিক উপকরণের মধ্যে রয়েছে—জায়নামাজ, জলচৌকি, তসবি, রুদ্রাক্ষমালা, জপেরমালা, মঙ্গলপ্রদীপ, মঙ্গলসূত্র, কোরবানির ছুরি, বলির দা, লক্ষ্মীর পাঁচালি ও পুঁথি।
ক্রীড়া ও বিনোদন উপকরণের মধ্যে রয়েছে—লাটাই, ঘুড়ি, মার্বেল, গুলতি, ডাংগুলি, লুডু, ক্যারম, বাঘাডুলি, রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট প্লেয়ার, ভিসিআর ও ভিসিডি।
বৈবাহিক উপকরণের মধ্যে রয়েছে—বিবাহের পোশাক, কাবিননামা, টোপর, সিঁদুরের কৌটা, বিবাহের কবিতা, বিবাহের কার্ড, বিবাহের ট্রাংক ও স্যুটকেস।
দলিল, চিঠিপত্র ও নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে—দলিল, পুরোনো পোস্টকার্ড, চিঠিপত্র, খাজনা আদায়ের রসিদ, সনদপত্র, পাট্টা ও মৌজা ম্যাপ।
ভাষা গ্যালারি
ভাষা গ্যালারিতে রয়েছে দেশের ৬৪ জেলার আঞ্চলিক ভাষা। ৬৪ জেলার জন্য রয়েছে ৬৪টি ইলেকট্রিক সুইচ। একটি জেলার সুইচে চাপ দিলে ওই জেলার আঞ্চলিক ভাষায় লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘর আপনাকে স্বাগতম জানাবে।
মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি
এ জাদুঘরের একটি বিশেষ সংগ্রহশালা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি। এটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। অবশ্য এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ‘অপরাজেয় ৭১’ নির্মিত হয়েছে ২০১২ সালে। মুক্তিযুদ্ধে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অবদানের স্বীকৃতির নিদর্শন হিসেবে ইএসডিও প্রধান কার্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ভাস্কর্য ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’।
এখানে প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ; ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্ব; ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পর্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চিহ্ন উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পর্বে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সব স্বীকৃত বধ্যভূমির মাটি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, এ অঞ্চলের রণাঙ্গনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মারক সংরক্ষণ করা হয়েছে গ্যালারিতে। গ্যালারির দোতলায় একটি আধুনিক মিলনায়তন, মুক্তমঞ্চ ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসমৃদ্ধ অডিও-ভিজ্যুয়াল লাইব্রেরি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র নিয়মিত প্রদর্শনের মাধ্যমে, বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে।
কথা হয় ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী ও লোকায়ন জীববৈচিত্র্য জাদুঘরের ফোকাল পার্সন মো. আইনুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত ও ঘামে প্রতিষ্ঠিত আজকের এ সভ্যতা। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিকড় নতুন প্রজন্মকে জানানোর প্রয়াসে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠের ফল উৎসব, বর্ষা-মঙ্গল উৎসব, অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব, মাঘে পিঠা উৎসব হয় এখানে। বসন্তবরণের পাশাপাশি চৈত্রে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ মেলা, জমে কবিগানের উৎসবও। উৎসবে শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করেন। আবৃত্তিতে অংশ নেন স্থানীয় ও জাতীয় কবি-সাহিত্যিকরা।
আইনুল হক বলেন, ভবিষ্যতে জাদুঘরের গ্যালারি আরও বাড়ানো হবে। দেশে কত ধরনের পুতুল ও খেলনা রয়েছে সেগুলো নিয়ে গ্যালারির জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
কীভাবে যাবেন
দেশের যে কোনো জায়গা থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব পরিবহনে ঠাকুরগাঁও যেতে পারবেন। ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে কর্ণফুলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ এবং কেয়া পরিবহনের বাস চলাচল করে। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে ঠাকুরগাঁও যেতে পারবেন।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় ডায়াবেটিস হাসপাতালের পাশের রাস্তা দিয়ে চার কিলোমিটার দূরে আকচা গ্রামে লোকায়ন জাদুঘরে যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
ঠাকুরগাঁওয়ের নর্থ সার্কুলার রোডে বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে। ঘুরতে গেলে সেসব হোটেলে থাকা যাবে। এছাড়া সার্কিট হাউস ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসেও থাকা যাবে।
Jag/N