জাতীয় শোক দিবসের বাণী
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, কলঙ্কিত করা হয় সমগ্র বাঙালি জাতিকে। মহান আত্মদানকারী জাতির পিতার প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুসহ সেদিনের নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু এর অসাড়তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্ট জাতির কোন ধরনের সুবিধা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতির ভাগ্যে জুটবে না। তাই তিনি পৃথক বাঙালি জাতিস্বত্তার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই অসাম্প্রদায়িক জাতি তৈরীর নিরীখেই ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে তৈরী করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ যা অধিকতর অসাম্প্রদায়িক রূপ পেয়ে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ‘৬৬’র ৬ দফা কর্মসূচী, ‘৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান সবকিছুই গড়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় ভ‚মিকায়। এই দীর্ঘদিনের সংগ্রাম তাঁকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুরোধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির বন্ধু -বঙ্গবন্ধু।
মুক্তযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে পা রাখেন জাতির পিতা হিসেবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সম্বল করে শুরু করেন তাকে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ে। হাজারো প্রতিক‚তার মাঝেও তিনি ছিলেন আত্ম প্রত্যয়ী। বাঙালির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। আর এই বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে পুঁজি করে এক দল বিপথগামী নোঙরামির পথ পরিষ্কার করে। রাতের আঁধারে হত্যা করা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে। তার পর থেকেই আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক শক্তি,ধুলোয় লুন্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন।
জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতেই প্রয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সেই বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পেরেছেন। তবে তা সম্পূর্ণ নয়। আমরা চাই অভিযুক্ত পলাতকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাজটি পূর্ণাঙ্গ করা।
মো. রেজাউল করিম, কথাসাহিত্যিক মুঈদ রহমান, অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়