দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানের পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ জন্য তিনি সংসদের আগামী অধিবেনে বিশেষ কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই সংবিধানের পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন। সংসদ নেতাকে অনুরোধ জানাই তিনি যেন এই সংসদের আগামী অধিবেশনে সংবিধান পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে দেন। যেখানে ধর্মীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নতুন করে ভাবতে পারবো। সংবিধানের ৭০ বিধি প্রশ্নে সংবিধান সংশোধন অতি জরুরি।
মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, তা সংসদীয় ব্যবস্থার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার আমলেই এই সংবিধানের মৌল বিষয়গুলির পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। আর সামরিক শাসকরা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে এবং পাকিস্তানি রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে ওই সংবিধানকে ভোতা ছুরি দিয়ে জবাই করেছিল। সংবিধানের দ্বাদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের মৌল চরিত্র কিছুটা ফিরিয়ে আনলেও এমন সব বিধি বর্তমান, যা সরকার পরিচালনায় প্রধান নির্বাহীর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সংবিধানকে ধর্মীয় রূপ দিয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতি সরকারের উন্নয়নের বিশদ বর্ণনা করেছেন। সরকারের প্রণীত এই ভাষণে প্রশাসন, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সরস মন্তব্যে কঠিন সত্যগুলো থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। ভাষণে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের কোনো কথা উল্লেখ নেই। করোনার সময়েও আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ ধনী হয়েছেন। আবার বিপুলসংখ্যক দরিদ্র হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির দ্বাদশ সংশোধনের সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা তা মানেনি। যার কারণে সম্প্রতি অলি আহমেদ ক্ষমা চেয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বানের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কেবল সরবই নয়, সরকার উৎখাতের স্লোগান দিচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলার সময় তারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখে না। ২০০৬ সালে দেড় কোটি ভুয়া ভোটার ও নিজের লোককে প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল, তারই পরিণতিতে দেশকে আরেকটি সেনাশাসন দেখতে হয়েছে। জানি না এবার বিএনপির লক্ষ্য কী? কী তাদের উদ্দেশ্য? তারা নিশ্চয়ই খোলাসা করে বলছে না। কিন্তু কার্যাবলিতে স্পষ্ট তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার এখানে চায়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ, ধর্ম ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার কথা বলেন না। কারণ তারা এই ব্যবস্থাই বহাল রাখতে চায়। আমাদের বাম দাবিদার বন্ধুরা নির্বাচনী সংস্কারের কথা বললেও তাদের মূল দাবি এখন নির্বাচনকালীন সরকার। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি কেউ বা যুগপৎ সমন্বিত আন্দোলনের নামে তাদের সাথে শরিক হবে, সেই আলামতও স্পষ্ট।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ ও পেশীশক্তি এবং প্রশাসন ও ইসির ভূমিকা সমগ্র নির্বাচনে জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। নারায়ণগঞ্জের মতো ব্যতিক্রমী নির্বাচন মানুষকে আশা দেখিয়েছে। মানুষ নারায়ণগঞ্জের মতো ব্যতিক্রমী নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনেও দেখতে চায়। সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। আর এ্ই সরকারকে বহাল রেখেই সেটা সম্ভব। নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মানা, অর্থ, পেশীশক্তি ও প্রশাসনের ভূমিকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন এনেছে। কিন্তু আইনটি অসম্পূর্ণ এবং এটা সংশোধন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ কর্তা হিসেবে তাদের কুকর্মের দায় রাষ্ট্রপতির ওপর এসে পড়ে। এই উপচার্যরা কী ধরনের স্বৈরশাসক ও দুর্নীতিবাজ হয়ে ওঠেন এবং চাকরি বাণিজ্যে লিপ্ত হন, সেটা আমরা দেখেছি। বর্তমানে সব ভিসি শাহজালালের পক্ষে দল পাকিয়েছেন। সরকারকে বলবো, শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো ছাত্রদের দাবি মেনে নিন। একজন ভিসির জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হতে পারে না।
মেনন বলেন, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নিচের দিক থেকে কেবল আফগানিস্তানের ওপরে আছে। এজন্য নিশ্চয়ই আমরা লজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে বলেছিলেন ফুয়েল না দিলে ফাইল নড়ে না। এখন সেই দুর্নীতির ফুয়েলের দাম এতই বেড়েছে যে, ফাইল নড়ানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে অর্থপাচারকারীর তালিকা চাওয়ার পর উল্টো তিনি এই তালিকা এমপিদের কাছে চেয়েছেন। যেন এমপিরা অসত্য কথা বলেছেন। করোনা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের চেয়ে সফল কিন্তু টিকাদানে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের ওপরে মাত্র। টিকা সংগ্রহ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছিল, তার হিসাব কিন্তু আমরা পাইনি। দেশে টিকা উৎপাদানের চুক্তির বাস্তবায়ন দেখছি না।
ban/N