বিডি নীয়ালা নিউজ(২ই এপ্রিল১৬)-অনলাইন প্রতিবেদনঃ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক শীর্ষ বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত সকল কাজে অটিজম রয়েছে এমন লোকজনদের সানন্দে সম্পৃক্ত করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১২ সালের জন্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অটিজম আক্রান্ত লোকজনকে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে পুরো জনগোষ্ঠীকে এদের সম্পর্কে স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন।”
তিনি বলেন, “অটিজম আক্রান্তরা কোনভাবেই অবহেলিত হবে না-এমন নির্দেশনা রয়েছে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশের সকল চাইল্ডহুড সেন্টারে অন্তত দু’জন করে প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এটি বাধ্যতামূলক।” শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ন্যাশনাল অটিজম অ্যান্ড এনডিডি একাডেমি স্থাপন করেছে জানিয়ে পুতুল বলেন, “জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনায় মানসিক ও দৈহিক প্রতিবন্ধীদের যত বেশী সম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে।” জাতিসংঘের ‘অটিজম মোকাবেলা: এসডিজির আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কাতারের সহায়তায় অটিজম স্পিকস নামক সংস্থার উদ্যোগে এ শীর্ষ বৈঠকটি ছিল দিনব্যাপী কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্ব। এতে বিষয়বস্তুর আলোকে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিবের স্ত্রী বান সুন-টেক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন-মোমেন, কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলেয়া আহমেদ সাইফ আল-থানি, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত সারাহ মেন্ডেলসন, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত সাঈদ আকবর উদ্দিন এবং অটিজম সচেতনতা সৃষ্টির এই আন্দোলনের জনক স্যুজান রাইটস। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল তার ১২ মিনিটের বক্তব্যের শুরু করেন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। পুতুল বলেন, “আমার দেশ, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ সরকার, বিশেষ করে আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৈহিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ অথবা প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অটিজমসহ অন্যান্যভাবে দৈহিকভাবে অসুস্থ মানুষদের উপকারে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে গোটা প্রশাসনে।” তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে তাকে আমরা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছি। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক যে সনদ রয়েছে তা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ বদ্ধ পরিকর। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বে যে কটি দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করেছে তার অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ।” পুতুল বলেন, “গত ৭ বছরে এ সেক্টরে বাংলাদেশ যতটা কাজ করেছে, তা আন্তর্জাতিকভাবেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতীয়ভাবে যা করছে তাও মানবতার ক্ষেত্রে প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যে, রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে অটিজম আক্রান্তদের সমাজের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত করা সহজ হয়। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, অন্য যে কোন কঠিন সংকটেরও উত্তরণ ঘটানো সহজ হয় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতি সমগ্র জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হলে। তবে আইন প্রণয়নকারীদের আন্তরিক সহায়তা ব্যতিত সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ সে সুবিধা পাচ্ছে পুরোদমে।” সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বক্তব্য উপস্থাপন করার সময় বেশ কয়েকবার করতালিতে মুখরিত হয় গোটা মিলনায়তন। দর্শকদের মধ্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলসহ বাংলাদেশ মিশন এবং কন্স্যুলেটের সর্বস্তরের কর্মকর্তারাও ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সরব।
সুত্রঃ এনআরবি নিউজ