স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়েন্ত্রণে সামাজিক সম্পৃক্ততাকে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মো. মুশতাক হোসেন বাসসকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কমিউনিটির সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, জুনের শেষ থেকে, দেশে ডেঙ্গু সনাক্তের হার দ্রুত বাড়ছে, শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরের বাইরে অনেক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
মোশতাক বলেন, রোগের বিস্তার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে বর্ষাকালে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বাড়বে।
তিনি ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন যে একটি একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই বিপদ মোকাবেলা করা অসম্ভব।
ডেঙ্গু রোগের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা বলেন, দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত করতে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষার বুথ স্থাপন জরুরি। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি ডেঙ্গু পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে সিটি করর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত আবাসিক এলাকায় এডিস মশা দেখা যায়… এডিস মশার প্রজনন উৎস ঘরের ভেতরে ও বাইরে।
এডিস মশার জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে তিনি এটিকে গৃহপালিত প্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অন্যান্য প্রজাতির মশার থেকে আলাদা।
তিনি আরো বলেন, সুতরাং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এডিস মশার প্রজনন প্রকৃতি এবং জীবনচক্র বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদও বাশার বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে মশাবাহিত এ রোগের চিকিৎসা করায় দেশে ডেঙ্গু একটি বিশাল স্বাস্থ্য বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজনন উৎস ধ্বংসে বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে উল্লেখ করে বাশার বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে যারা সারা বছর ধরে ঢাকা শহরের নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বাড়ির তদারকির দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি পূর্বাভাস দেন যে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু সনাক্তের পরিমান বাড়বে কারণ এই দুই মাস এডিস মশার প্রজননের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান এই কীটবিজ্ঞানী।
দ্য ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, আমাদের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে হবে।
এডিস মশার বংশবৃদ্ধির প্রধান উৎস জমে থাকা পানির ব্যাপারে নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অল্প পরিমাণ পানিতেও এডিস মশা জন্মাতে পারে যা এ ধরনের মারাত্মক রোগের বিস্তার ঘটায়।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, বাসা-বাড়ি ও অফিসের ভেতরে-বাইরে কোনো ভাঙা পাত্র, টায়ার, ফুলের টব বা পাত্রে সামান্য পানি জমে থাকলেও তা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হতে পারে।
তিনি নগরবাসীকে জমে থাকা পানির উৎস সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান কারণ দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সম্পূর্ণ অবহেলা করে। সাম্প্রতিক সময়ে শহুরে পরিবেশে ছাদে বাগান করা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুসারে ৮ জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৮ শ’ ৭০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছিল এবং এই বছর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২,১১৮। অপরদিকে জুলাই ১ থেকে ৮ এর মধ্যে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৬৭ জনে পৌঁছেছে।
BSSN