ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলের একের পর এক বিমান ও স্থল অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
শনিবার কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের ৩৪ জন সরাসরি ত্রাণ নেওয়ার সময় হামলার শিকার হন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হামলার স্থানগুলো ছিল গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে।
উল্লেখ্য, এই ফাউন্ডেশনটি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি বিতর্কিত সংস্থা।
এদিকে সবচেয়ে ভয়ারবহ প্রাণঘাতীর ঘটনা ঘটেছে গাজার কেন্দ্রে। যেখানে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করা সাধারণ মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ওই ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার অন্য একটি হামলায় আরও ১১ জন নিহত হন।
এদিকে গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের পশ্চিমে একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় অনেকেই হতাহত হন। একই দিনে গাজা শহরে ইসরাইলি বোমা বর্ষণের তীব্রতা বাড়ায় আরও ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪০৯ জন সহায়তা প্রত্যাশী ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩,২০০ জনেরও বেশি।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বারবার খাবার ও পানি বিতরণের কেন্দ্রগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার বলেন, গাজার পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’ এবং পানির পরিকাঠামো ভেঙে পড়ায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, গাজার মাত্র ৪০ শতাংশ খাবার পানির সরবরাহব্যবস্থা এখনও সচল আছে। শিশুদের পিপাসায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
এলডার আরও বলেন, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নির্দিষ্ট সময়সূচি না থাকায় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং অনেক সময় তারা গোলাগুলির মুখে পড়ে যাচ্ছে।
‘অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ভুলভাবে ভেবে ত্রাণকেন্দ্র খোলা আছে মনে করে সেখানে ছুটে গেছে, আর তখনই তারা হামলার শিকার হয়েছে।’
যদিও গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন দাবি করেছে, তারা কোনো ঘটনা ছাড়াই তিনটি কেন্দ্রে ৩০ লাখ খাবার সরবরাহ করেছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে এই সংস্থার উপস্থিতিই ‘বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে’—বিশেষ করে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত চলা ইসরাইলি অবরোধে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা আরও বেড়েছে ইসরাইল ও ইরানের পারস্পরিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েব এরদোগান ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে ‘উন্মত্ততা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই উন্মাদনা দ্রুতই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে যেখান থেকে আর ফেরার পথ নেই।
তিনি বলেন, এই উন্মত্ততা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করতে হবে।
এরদোগান আরও বলেন, ইসরাইল নিজেই যেখানে গাজায় ৭০০ এর বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। সেখানে তারা ইরানি হামলায় হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে যে সমালোচনা করছে, তা পুরোপুরি ভণ্ডামি।
jug/N