ইসকনকে নামিয়েছে হাসিনা নিষিদ্ধের দাবি আইনজীবীদের

ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনা এবং মোদী ইসকনকে মাঠে নামিয়েছেন। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
তারা বলেছেন, ভারত শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ মেহমান হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। মোদী সরকার শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে, শুভেন্দু সরকারকে কোলকাতায় রেখে ইসকনকে মাঠে নামিয়েছে। এই যোগসূত্র দেশের মানুষ বুঝে গেছে। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এদেশে এখনো যারা হাসিনার রেজিমের হয়ে কাজ করছো, তারা কিন্তু বঙ্গোপসাগরেও আশ্রয় পাবে না। চট্টগ্রামে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদ-সমাবেশে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আইনজীবী সমাজ।


গতকাল সুপ্রিমকোর্ট বারসহ দেশের সব আইনজীবী সমিতি এবং বিভিন্ন জেলায় আলিফ হত্যার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নেন সর্বস্তরের আইনজীবীরা।


সুপ্রিমকোর্ট বারের সামনে গতকাল দুপুরে আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র অ্যাড. জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, একদিকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। তাকে সর্বোচ্চ মেহমান হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। মোদী সরকার শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে, শুভেন্দু সরকারকে কোলকাতায় রেখে এইদিকে ইসকনকে মাঠে নামিয়েছে। এই যে যোগসূত্র, এই যোগসূত্র কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, হাসিনা রেজিমের যারা আছো, রেজিমপ্রধান ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তোমরা যারা আছো, তারা কিন্তু বঙ্গোপসাগরেও আশ্রয় পাবে না।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, যখন আমরা স্লোগান শুনি, জয় শ্রীরাম-জয় শেখ হাসিনা। এ শ্লোগান কি হিন্দুদের স্লোগান হতে পারে? এ স্লোগান শেখ হাসিনার স্লোগান। আজকে হিন্দুদের নাম করে শেখ হাসিনার দোসররা বাংলাদেশে আবার প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজকে ইসকনকে মাঠে নামানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ইসকন যখন মাঠে নামে, তখন আমরা দেখি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু সরকার অধিকারী ওখানে দাঁড়িয়ে লাফায়। কার নির্দেশে এগুলো হচ্ছে? একদিকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। তাকে সর্বোচ্চ মেহমান হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। মোদী সরকার শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে। শুভেন্দু সরকারকে কোলকাতায় রেখে এইদিকে ইসকনকে মাঠে নামিয়েছে।

আইনজীবী সমাজের উদ্দেশে আমি একটি কথা বলতে চাই। বিগত ১৭ বছর আপনারা রাজপথে ছিলেন। ফ্যাসিস্ট রেজিমের পদত্যাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে আমার ভাই আমাদের মাঝখান থেকে হারিয়ে গেছে। এই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আর সেই শাস্তির জন্য আইনজীবীদের একটি ভূমিকা আছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক আইনজীবী আছেন, ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষে মামলা-মোকদ্দমা করছেন। আইনি আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে। তাই বলে আমি আমার ন্যায়-নীতি বিসর্জন দেবোÑ তা কিন্তু হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, আমরা একটি আদর্শের জন্য লড়াই করছি। আইনের শাসনের জন্য লড়াই করছি। আইনের শাসনে যারা বাঁধা দেবে তাদের সাথে আইনজীবী সমাজ থাকতে পারে না। পারবে না ইনশাআল্লাহ।

আগামি দিনে যে কর্মসূচি আসবে সেটি সফল করার জন্য প্রয়োজনে আবার রাস্তায় নামবো। সরকারকেও হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যদি আইনজীবী হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা হয় পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না।
এদিকে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন গোটা আইনজীবী সমাজ। উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তারা। প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল দেশের আইনজীবী সমিতিগুলো।

গতকাল অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন সর্বস্তরের আইনজীবী, ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও গায়েবানা জানাজা। এসব জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন।
গত মঙ্গলবার বিকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর এবং কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে ইসকন সমর্থকদের রামদায়ের উপর্যুপরি কোপে অ্যাড. আলিফ নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা-কর্মীরা সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মাজার গেট, কদম ফোয়ারা প্রদক্ষিণ করে কাউন্সিলের গেট দিয়ে আবার সুপ্রিমকোর্টে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে আলিফের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করা হয়।

এর প্রতিবাদে গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আইনজীবীরা। মিছিলটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রদক্ষিণ করে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে এসে শেষ হয়।
আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী আইনজীবী পরিষদ। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাড. শেখ লুৎফর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রাম জজ আদালতে দিন-দুপুরে একজন তরুণ আইনজীবী আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীরা কুপিয়ে হত্যা করে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকা- পরিকল্পিত হত্যাকা-। গতকাল দুপুরে ঢাকা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ লুৎফুর রহমান আরো বলেন, উগ্রবাদীরা মরিয়া হয়ে উঠছে। তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে দেশবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে দেশকে অশান্ত করে তুলছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাড. মানিক মিয়া, জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাড. মোহাম্মদ হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম মিলন, অ্যাড. জিএম নজরুল ইসলাম, ঢাকা বার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. হাফেজ মাওলানা এম হাছিবুল ইসলাম, অ্যাড. বরকত উল্লাহ লতিফ, অ্যাড. জুবায়ের আহসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। বক্তারা বলেন, আমাদের সহকর্মী তরুণ অ্যাড. সাইফুর ইসলাম আলিফকে যারা হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে হবে। ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ইসকন হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। শহীদ অ্যাড. সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকা-ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনজীবীরা রাজপথ ছাড়বে না বলেও জানান তারা।
আলিফ হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

গতকাল সকালে জেলা আইনজীবী সমিতি চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি অ্যাড. শামিম রেজা ডালিম।
এ সময় বক্তারা বলেন, আলিফ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কোনোক্রমেই হত্যাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গাফিলতি করলে তাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামতে হবে। কোনো আপোস নয়, হত্যার বদলে ফাঁসি চাই। সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা আ স ম আব্দুর রউফ, মইনুল হোসেন, ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জালাল উদ্দিন প্রমুখ।

আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন পঞ্চগড়ের আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে মিছিলটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিনুল করিম দুলাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। বক্তারা বলেন, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। এটি একটি উগ্র এবং সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য ভারতীয় অ্যাজেন্ডার কাজ করছে। আলিফকে যারা হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। সমাবেশে পঞ্চগড় জেলা কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর আদম সুফি, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মেহেদী হাসান মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একই দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে রাজশাহী বারে। সকাল ১০টায় রাজশাহী বার সমিতির কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বারের সভাপতি আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
অ্যাড. আবুল কাসেম বলেন, এভাবে আইনজীবীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ঘটনাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে সনাতনীদের উস্কানি দিচ্ছে। বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

da/iN