ডেস্ক রিপোর্টঃ নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৯০৩তম পর্বে স্বামী-স্ত্রীর জুড়ি আল্লাহতায়ালা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন কি না সে সম্পর্কে বায়তুল মোকাররম, নূরপুর ঢাকা থেকে চিঠিতে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : স্বামী-স্ত্রীর জুড়ি এবং বিয়ের তারিখ কি আল্লাহ পাক আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন? পুরুষদের বাম পাজর থেকে কি মহিলাদের সৃষ্টি করা হয়েছে?
উত্তর : প্রথম প্রশ্নের ক্ষেত্রে এই মাখলুকাতের মধ্যে, সৃষ্টি জগতের মধ্যে যা কিছু হচ্ছে, কেয়ামত পর্যন্ত যা হবে, সবকিছু আল্লাহু রাব্বুল আলামিন লাওহে মাহফুজে আল কিতাবের মধ্যে লিখে দিয়েছেন। কলমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কলম লিখে ফেলেছে। সুতরাং এটা নিয়ে আপনার আমার গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। এটা আমাদের দায়িত্বও না, কাজও না। কারণ সেই লেখা সম্পর্কে জ্ঞান তো আমাদের নেই। এ নিয়ে আমাদের বাহাস করার, গবেষণা করার কোনো প্রয়োজন নেই। ওই লেখা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন লিখেছেন, যেহেতু আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা জানেন।
আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমল করার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘তোমরা আমল কর, তোমাদের আমল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ করা তার জন্য সহজতর করে দেওয়া হবে।’ তুমি কাজের জন্য এগিয়ে যাও। যে কাজ করতে পারবে, সেই এগিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং তাকে ওই আল্লাহু তায়ালার লেখনী নিয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব বা এ নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্ব তার নয়।
আর তাকদিরকে দলিল হিসেবে পেশ করা আহলে সুন্নাত আল জামাতের আকিদা অনুযায়ী শুদ্ধ নয়। কোনো ব্যক্তি একথা বলার সুযোগ নেই যে, আমার তাকদিরে আছে বলেই এ কাজটি হয়েছে। কেউ বললে তিনি তাকদিরকে দলিল হিসেবে পেশ করলেন। কেউ বললেন, ‘আমিতো ফকির, কারণ আল্লাহ আমাকে ফকির করেছেন’। এটা ভুল কথা। আবার গাড়িতে দুর্ঘটনার শিকার হলে বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে পাইছেন, গাড়ি দিয়ে আমাকে অ্যাকসিডেন্ট করাইছেন।’ এগুলো তাকদিরকে দলিল হিসেবে পেশ করা, যা একেবারে জঘন্য কাজ, হারাম কাজ। এটাকে আহলে সুন্নাত আল জামাত কখনো তাকদিরকে দলিল হিসেবে পেশ করার জন্য ব্যবহার করেন না।
এ জন্য তাকদিরের বিষয়টি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এলমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়। এটি নিয়ে বান্দার এলম নেই। বান্দার এ নিয়ে গবেষণা করারও প্রয়োজন নেই, এর পেছনে সময় নষ্ট করারও প্রয়োজন নেই। বান্দা ভালো কাজ করার চেষ্টা করবে। তাকে পথ দেখানো আছে। ‘আমরা তাকে দেখিয়ে দিয়েছি দুটি পথ।’ সুতরাং যেটি ভালো পথ, বান্দা সেদিকে অগ্রসর হতে থাকবে। চেষ্টা করে যাবে, যত দ্রুত সম্ভব আল্লাহু তায়ালার তওফিক অনুযায়ী আগাতে থাকবে, এবং দেখবে যে চেষ্টা করলে তার জন্য পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আর সে যদি অপেক্ষা করে থাকে, যে আল্লাহ আমার জন্য কি রেখেছে, তাহলে সে কিছুই করতে পারবে না। কারণ সে তো জানে না, জানতে পারবেও না, সুযোগও নেই।
এ জন্য একজন নর বা নারী যদি বিয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেন, অগ্রসর হন, তাহলে তাদের কর্মফল তাঁরা পাবেন। আল্লাহ এটা জানেন বলে আগে থেকে লিখে রেখেছেন। সেটা নিয়ে গবেষণা আমাদের কাজ নয়। দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে, পুরুষদের বাম পাজর থেকে মহিলাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, কথাটি শুদ্ধ নয়। বরং আদম (আ.)-এর বাম পাজর থেকে হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে সৃষ্টির শুরুতে। এটা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। আপনার জিজ্ঞাসা