Thursday, 17 April 2025, 07:09 AM

এই ছোট্ট সুন্নতটি আমল করলে শত্রু বন্ধুতে পরিণত...

ডেস্ক রিপোর্টঃ মুসলমানেরা একে অপরকে অভিবাদন ও স্বাগত জানানোর ধর্মীয় মাধ্যম হলো সালাম। সালাম শান্তি ও নিরাপত্তার স্মারক। শ্রদ্ধা ও স্নেহের প্রতীক। প্রীতি ও ভালোবাসার সূতিকাগার। মুমিনের চারিত্রিক ভূষণ। সালামের আদান-প্রদান মুসলমানদের পরিচয়বহ অন্যতম মহৎ গুণ। সালাম জান্নাতবাসীদের একে অপরকে অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমও বটে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম।’ (সূরা আহজাব : ৪৪)।

সালাম শব্দের অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা। সালাম দেয়া-নেয়ার অর্থ হলো অন্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করা। অর্থাৎ সালাম দেয়ার মাধ্যমে অন্যের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, ‘আপনার জানমাল ও ইজ্জত-আব্রু আমার সব ধরনের অনিষ্ঠতা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমার পক্ষ থেকে আপনি কষ্টদায়ক ও অপমানকর কোনো কিছুর সম্মুখীন হবেন না।’

সালামের মাধ্যমে মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও হৃদ্যতার উন্মেষ ঘটে। বড় ও ছোটদের মধ্যে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সালামের প্রচলনের প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে রাসূল সা: ইরশাদ করেন- ‘তোমরা ঈমানদার হওয়া বিনে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে না, ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন পন্থা বাতলে দেবো, যা করলে তোমাদের পরস্পর একে অন্যকে ভালোবাসবে? তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচার ও প্রসার ঘটাও।’

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা: বলেন, ‘তিনটি জিনিস তোমার প্রতি অন্যের ভালোবাসাকে নিখাদ করবে- ১. দেখা হলে তাকে সালাম দেয়া। ২. কোনো মজলিসে স্বাভাবিকতার সাথে তাকে বসার সুযোগ দেয়া। ৩. তাকে তার প্রিয় নাম ধরে ডাকা।
সালাম না দেয়া কিংবা সালামের উত্তর না দেয়া বেশ নিন্দনীয় ও দৃষ্টিকটু। সালাম না দিলে অথবা সালামের উত্তর না দিলে অন্য পক্ষ ক্রোধ-অসন্তুষ্টি ও অনিষ্টের আশঙ্কা করতে পারে। আর এতে করে পারস্পরিক প্রীতি-সৌহার্দ্য হ্রাস পায় এবং অহঙ্কার ও বড়ত্বভাব প্রকাশ হয়।

তাই কারো সাথে সাক্ষাৎ ঘটলে সর্বপ্রথম সালাম দেয়া উত্তম। হাদিস শরিফে আছে- ‘আগে সালামদাতা অহঙ্কার থেকে মুক্ত।’ আরেকটি হাদিসে আছে- ‘যে আগে সালাম দেয়, সে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম।’

সালাম দেয়া সুন্নত। রাসূল সা: বেশির ভাগ সময় সাহাবিদের আগে সালাম দিতেন। সালাম দেয়া সুন্নত হলেও সালাম নেয়া বা সালামের উত্তর দেয়া কিন্তু ওয়াজিব। কেউ সালামের উত্তর না দিলে তার ওপর গুনাহের দায়ভার বর্তাবে। ক্ষেত্রবিশেষে পদস্থ ব্যক্তি ও অবস্থাসম্পন্নদের দেখা যায়, তারা সালাম দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন। এ ধরনের গর্হিত কারণে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমাদের সালাম দেয়া হয় তোমরা উত্তম পন্থায় অথবা তদানুরূপ উত্তর দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে হিসাবরক্ষক।’ (সূরা নিসা : ৮৬)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সালাম আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর একটি নাম। অতএব, তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন ঘটাও। কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি কিছু মানুষের পাশ দিয়ে যায় এবং তাদের সালাম দেয়, তারাও তার সালামের জবাব দেয়, তাহলে সালামের উত্তর দেয়া তাদের একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হয়। আর যদি তারা তার সালামের জবাব না দেয়, তাহলে যিনি সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ তিনি তার সালামের জবাব দেন।’

বাসাবাড়িতে সালামের প্রচলনের দ্বারা আল্লাহর অফুরান অনুকম্পা ও অবারিত বরকতের ফল্গুধারা বয়ে যায়। প্রাচুর্যতা ও স্বাচ্ছন্দ্যতার শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: আমাকে বলেছেন- ‘হে আমার পুত্র (মানসপুত্র)! ঘরে প্রবেশের সময় তুমি তোমার ঘরের মানুষদের সালাম দেবে। তাহলে সালাম তোমাদের জন্য কল্যাণ ও প্রাচুর্যতাপূর্ণ হবে।’ যেসব ঘরে সালামের প্রচলন রয়েছে সেসব ঘরে বরকত, সচ্ছলতা ও তুষ্টির প্রভাব দারুণভাবে লক্ষণীয়।

কেউ সালাম দিলে তাকে হ্যালো বলে, ধন্যবাদ জানিয়ে বা তার শুকরিয়া জ্ঞাপন করে অথবা শুধুমাত্র মাথা দুলিয়ে কিংবা হাত নেড়ে ইত্যাদি মাধ্যমে সালামের উত্তর দিলে উত্তর আদায় হয় না। তবে কেউ যদি দূরে থাকে, সালামের আওয়াজ সে পর্যন্ত পৌঁছার সম্ভাবনা না থাকে, তখন সালাম উচ্চারণের পাশাপাশি হাত তোলার অনুমোদন রয়েছে। ইহুদি-খ্রিষ্টান ও অমুসলিমদের রীতি অবলম্বনে হাত তুলে কিংবা আঙুলের ইশারায় সালাম দেয়া ইসলামে বৈধ নয়। রাসূল সা: ইরশাদ করেন- ‘সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়, যে অন্যদের (ভিন্নধর্মাবলম্বী) সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য গ্রহণ করো না। ইহুদিরা আঙুল ও খ্রিষ্টানেরা হাতের ইশারায় সালাম দিয়ে থাকে।’ বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনায় এসেছে- ‘তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মতো সালামে অভ্যস্ত হয়ো না। তারা হাত তোলে, মাথা ঝুঁকে এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে অভিবাদন আদান-প্রদান করে।’

সালাম মানুষকে নিরহঙ্কার করে তোলে এবং কপটতামুক্ত থাকতে সহায়তা করে। সালামের আদান-প্রদান থাকলে মানুষে মানুষে দূরত্ব থাকে না। সালামের মাধ্যমে শত্রুকেও আপন করে নেয়া যায়। অহমিকাবোধ মানুষকে সালাম আদান-প্রদানে বাধাগ্রস্ত করে। নিরহঙ্কারী হতে হলে সালাম দেয়া-নেয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা চাই।

মুসলমানদের নির্দিষ্ট কোনো জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে সালামের আদান-প্রদান সীমাবদ্ধ নয়। পরিচিত-অপরিচিত সব মুসলমানের মধ্যে সালামের আদান-প্রদান কর্তব্য। এটি এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের অধিকার। হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: এরশাদ করেন- ‘মুসলমানদের একে অপরের প্রতি ছয়টি হক বা অধিকার রয়েছে।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন- সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল?

রাসূল সা: এরশাদ করেন : ‘১. সাক্ষাতে তার প্রতি সালাম জানাবে। ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তার দাওয়াত কবুল করবে। ৩. তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তাকে (নিঃস্বার্থে) উপদেশ দেবে। ৪. সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে তাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি করুণা করুন) বলে তার জন্য দোয়া করবে। ৫. অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবাশুশ্রুষা করবে। ৬. সে মারা গেলে তার জানাজায় উপস্থিত হবে। (মুসলিম)।

সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে পদমর্যাদা, বিত্ত-বৈভব, বর্ণ-বংশ ও ক্ষমতা-দাপট এবং গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনা করা উচিত নয়; বরং সর্বস্তরের মুসলমানকে সালাম দেয়া চাই। সালামের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ কাম্য। লেখক : প্রবন্ধকার

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P