আন্তর্জাতিক রিপোর্টঃ বুধবার থেকে রাজকোটে শুরু হচ্ছে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। বিশ্ব টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারত অনেকটাই ভঙ্গুর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পুরনো হিসেবটা চুকিয়ে ফেলার মিশনেই মাঠে নামবে। আর এ লক্ষ্যে দলের মূল অস্ত্র ‘স্পিন যাদু’ নিয়ে এই মুহূর্তে গর্ব করতেই পারে টিম ইন্ডিয়া।
সর্বশেষ ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে দেশে ফিরেছিলে ইংলিশরা। কিন্তু বর্তমানে দূর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারতীয় বিপক্ষে সেই পরিসংখ্যান যে খুব একটা কাজে আসবে না তা ইংল্যান্ডও বুঝতে পারছে। বিশেষ করে দলীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির অধীনে এ যেন সম্পূর্ণ নতুন এক ভারত যাদের কাছে অসাধারণ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি আছে রবিচন্দ্রন অশ্বীনের মত বিশ্বসেরা স্পিনার। কোহলি নিজেও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, ব্যাট হাতেও নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকই পালন করে চলেছেন। চলতি বছর তার ব্যাট থেকে এসেছে দুটি টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১৫ সালে দলের দায়িত্ব নেবার পরে টানা চারটি সিরিজে ভারতকে জয় উপহার দিয়েছেন। সম্প্রতী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ ভারতকে করে তুলেছে আত্মবিশ্বাসী।
বর্তমানে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার পথটা মোটেই মসৃন ছিল না। বিশেষ করে ২০১১, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট পরাজয় ভারতকে বেশ হতাশাগ্রস্থ করে তুলেছিল। কিন্তু সেসব কিছুকে পিছনে ফেলে এযেন এক অন্য ভারত। এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডকে তাই ঘরের মাঠে পেয়ে প্রতিশোধটা নেবার পরিকল্পনা করতেই পারে কোহলি বাহিনি। আর এতে মদদ যোগাচ্ছে দলের মূল ভরসা রবিচন্দ্রন অশ্বীনের সাম্প্রতীক ফর্ম। ব্ল্যাক ক্যাপসদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পিছনে তার অবদান ছিল সর্বাগ্রে। এই টেস্টেই অশ্বীন সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে টেস্টে ২০০ উইকেট দখলের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে স্পিনারদের বিপক্ষে সমস্যায় পড়া ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ ভারতের মাটিতেও যে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না তা সহজেই অনুমেয়। ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা কেভিন পিটারসন বলেছেন, ‘অশ্বীন খুবই ভাল বোলার। সে তার বৈচিত্র্য বেশ ভালই ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে ক্রিজে তার আগ্রাসী মনোভাব দারুন প্রশংসনীয়।
এ্যালিস্টার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। গত মাসে বাংলাদেশী তরুন স্পিনার মেহেদী হাসানের ১৯ উইকেট প্রাপ্তিতে ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টে পরাজিত করেছিল স্বাগতিকরা। ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের স্পিনারদের ব্যর্থতা ছিল স্পষ্ট। কিন্তু তারপরেও কুক বিশ্বাস করেন আদিল রশীদ, মঈন আলী ও নতুন জাফর আনসারিকে নিয়ে সাজানো স্পিন বিভাগ ভারতের মাটিতে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে। ৩৯ বছর বয়সী গ্যারেথ ব্যাটিকেও তারা ফিরিয়ে এনেছে। স্পিনারদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন পাকিস্তানী তারকা সাকলাইন মুশতাক। কুক মনে করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে পরাজয়ের হতাশা ভুলে তার দল ঠিকই ঘুড়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, প্রতিবারই এই দলটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কিন্তু আমরাও নিজেদের উন্নতির জায়গাটা ঠিকই খুঁজে নিয়েছি। আশা করছি এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এবারের সিরিজে আমরা সবদিক দিয়েই আন্ডারডগ। সে কারনেই আমাদের হারানো কিছু নেই।
গত আট ইনিংসে গড়ে মাত্র ১৮ রান করা গ্যারি ব্যালেন্সকে নিয়ে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারও বেশ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী জিমি এন্ডারসন ইনজুরিতে থাকায় ইংল্যান্ড তাদের পেস বিভাগ নিয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। যদিও দেশের হয়ে ৪৬৩ উইকেট দখল করা এন্ডারসন কাঁধের ইনজুরি কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন, কিন্তু প্রথম টেস্টে তাকে দলে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতীয় দলেও অবশ্য কিছু কিছু জায়গা নিয়ে দু:শ্চিন্তা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে দলের টপ অর্ডার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। গত ১৪ টেস্টে পাঁচবার ওপেনিং পার্টনারশীপ পরিবর্তন করা হয়েছে। এই কয়টি টেস্টে এ পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটিতে কোন সেঞ্চুরি আসেনি। প্রথম দুই টেস্ট থেকে ইতোমধ্যেই ছিটকে পড়েছেন শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুল। নির্বাচকরা তাই নতুন কম্বিনেশনের খোঁজে আছে।
কোচ অনীর কুম্বলে অবশ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অতীত স্মৃতি এখানে টেনে এনে কোন লাভ নেই। সামপ্্রতীক ফর্মটাই জরুরী।
রাজকোটের টেস্টের পরে পরবর্তী ম্যাচগুলো যথাক্রমে ভিশাকাপত্তম, মোহালী, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
স্কোয়াড :
ভারত : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মুরালি বিজয়, গৌতম গাম্ভীর, চেতশ্বর পুজারা, অজিঙ্কে রাহানে, রিদ্ধিমান সাহা (উইকেটরক্ষক), হারদিক পান্ডে, করুন নায়ার, রবিচন্দ্রীন অশ্বীন, অমিত মিশ্রা, রবিন্দ্র জাদেজা, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ সামী, উমেশ যাদব, জয়ন্ত যাদব।
ইংল্যান্ড : এ্যালিস্টার কুক (অধিনায়ক), মঈন আলী, জাফর আনসারি, জনি ব্যারিস্টো, জেক বল, গ্যারি ব্যালেন্স, গ্যারেথ ব্যাটি, স্টুয়াট ব্রড, জোস বাটলার, বেন ডাকেট, স্টিভেন ফিন, হাসিব মাহমুদ, আদিল রশীদ, জো রুট, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস।
বি/এস/এস/এন