Sunday, 09 March 2025, 08:29 PM

অবিবাহিত ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কি স্থায়ী বন্ধুত্ব...

                                                …………মাহফুজার রহমান মণ্ডল

বন্ধু কথাটা অতি মধুর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বন্ধুত্বর কারনে অসম্ভব কাজ নিমিষেই সম্ভব হয়ে যায়। বন্ধু হলো চলার একটা শক্তি যা আপনাকে সাহস যোগাবে। বন্ধু হতে পারে কাছের মানুষ অথবা দুরের মানুষ। বন্ধুতো বন্ধুই, যুগে যুগে মানুষ বেঁচে আছে বন্ধুত্ব করে। স্কুল-কলেজ বা পড়ার মানুষের যেমন বন্ধু, বয়স বাড়ার সাথে সাথে যাদের সাথে পরিচয় হচ্ছি সেখান থেকেও বাড়ছে বন্ধুত্ব। সোজা কথা চলার পথে পরিচিত-অপরিচিত যাদের সাথে মত বিনিময়ে মতের মিল হচ্ছে তারাই বন্ধু। জীবনের চলার পথে ভালো বন্ধু বা খারাপ বন্ধুর সৃষ্টি হয়, প্রথমে মনে হয় ভালো স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে বন্ধুত্ব গেল।

বন্ধুত্ব হতে পারে ছেলে-ছেলে, মেয়ে-মেয়ে বা ছেলে-মেয়ে। যুগে যুগে ছেলে-ছেলে, মেয়ে-মেয়ের বন্ধুত্ব যেমন চোখে পরে তেমনি ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বও চোখে পরে আর ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব নিয়েই নানান জনের নানান মত। এটা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনারও শেষ নেই। ছেলে-মেয়েদের বন্ধুত্ব বৈধ কি না তা নিয়েও যুক্তি আছে। মাঝে মাঝে শুনা যায়- জাস্ট ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড, এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ব্যাখ্যা চাইলে বলে- শয়নে স্বপনে তাকে ছাড়া আমার চলে না, চলবেও না। ক্লাস ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা, বন্ধু হিসাবে জানতে চাইলে বলে- দোস্তদের সাথে আড্ডা মারতে ভালোই লাগে, একে অপরকে কোনদিনও ছাড়তে পারব না। আবার অন্য স্কুল বা কলেজের ছাত্রদের সাথে পরিচয়ে বন্ধুত্ব যেন জাস্ট ফ্রেন্ড, পাড়ার ছেলেরা গুড ফ্রেন্ড।

যাইহোক ছেলে-ছেলে বা মেয়ে-মেয়ে বন্ধুত্ব সমাজে মেনে নেয় কিন্তু মেয়ে-ছেলে বন্ধু এ কিভাবে সম্ভব? আপাতত দৃষ্টিতে পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে দেখে কিছু মনেই হয় না কিন্তু ইসলামে এটা একেবারেই হারাম ও নিষিদ্ধ। যেখানে একজন নারীর জন্য ১৪ জন পুরুষ ব্যতিত সব পুরুষ এবং একজন পুরষের জন্য ১৪ জন্য নারী ব্যাতিত সব নারী সাথে দেখা-সাক্ষাত হারাম করেছেন সেখানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করা একেবারেই অসম্ভব। কারন, বন্ধুত্ব নামক সম্পর্ক থেকে আস্তে আস্তে নির্লজ্জপনা সম্পর্কে গিয়ে পৌছায়। এমনকি স্পর্শকাতর হয়ে  মিলিত হয়। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “(হে রাসুল সাঃ) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত ও নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। – সুরা আন-নুর।

পৃথিবী সৃষ্টি লগ্ন থেকে আজ অবদি ইসলাম আমাদের শত শত ফর্মুলা দিয়েছে ভাল থাকার জন্য। ইসলাম একটা শান্তির প্রতীক যা মেনে চললে আজ আমাদের অশান্তির জায়গাটা প্রশমিত হতো না। 

শুধু ইসলাম কেন? পশ্চিমা দেশের কবি, নাট্যকার ও অভিনেতা শেক্সপিয়র  বলেছিলেন “একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না! কারণ এখানে  আবেগ আছে! দৈহিক আকাঙ্খা আছে ।”

তাহলে ভাবুন কি করে এই প্রখ্যাত নাট্যকার একথা বললো? এছাড়া একই কথা বলেছেন আইরিশ কবি অস্কার ওয়াইল্ড”নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব । যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্খা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা।”

হ্যাঁ, কবিদের বানী মিথ্যা হয় না, সময়ের প্রয়োজন। সময়ে সবকিছু বলে দেয় তুমি কি চাও। মোম ও আগুন পাশাপাশি রাখলে গলে যাবে সন্দেহ নেই। লোহা ও চুম্বক পাশাপাশি রেখে দেখেন কি অবস্থা দাড়ায়। এগুলো প্রকৃতির নিয়ম কিন্তু সাধারণ ঘর-দুয়ার খোলা রেখে দেখেন আপনার ধনরত্নের হিসাব মেলে কি না? ধরে নিন চোর আপনার বন্ধু কিন্তু আপনি কি তাকে বিশ্বাস করতে পারবেন? তাই ছেলে-মেয়ে বন্ধু হতে পারবে, কিন্তু একসময় প্রেমে পরবে পরে অবৈধ সম্পর্কে রুপ নিবেই। শুধুই সুযোগের অপেক্ষা আর এটাই বাস্তব।

পশ্চিমা দেশের মতো অনেক দেশের কবি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে  স্থায়ী বন্ধুত্ব যেমন মেনে নেয়নি তেমনি আমাদের দেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন  আহমেদ বলেছিলেন, “ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে কিন্ত তারা অবশ্যই প্রেমে  পড়বে। হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য। তবে প্রেমে তারা পড়বেই।”

তাহলে এটাই স্পষ্ট যে ছেলে-মেয়ের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্বতো দুরের কথা সাধারণ বন্ধুত্ব হতে পারে না। বন্ধুত্ব হলে প্রেমে পরবে পরে অবৈধ সম্পর্ক বা বিয়ে হবে। আর বিয়ে হলেতো কোন কথাই নেই পরে স্থায়ী বন্ধুত্ব সম্ভব। কিন্তু অবিবাহিত থেকে এটা কোন দিনও সম্ভব নয়।

বর্তমান সময়ের বয় ফ্রেন্ড ও গার্ল ফ্রেন্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা বাস্তব কিন্তু এটার আড়ালে চলছে অবৈধ সম্পর্ক যা উভয়েই স্বাধীনভাবে দৈহিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার একটা পায়তারা। এতে কারো প্রতি কারো কোনরূপ দায়বদ্ধতা থাকছে না বা  কোন কমিটমেন্টসও থাকছে না। আজ বিশ্বের অনেক দেশে এই গার্ল ফ্রেন্ড বা বয় ফ্রেন্ড-এর খুব প্রচলন দেখা যাচ্ছে এটাকে তারা স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে কিন্তু আমরা এটাকে কিভাবে নিব?

আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা আদিকাল থেকে একটা নিয়মের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। এছাড়া ইসলাম আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা মুসলিম হিসাবে আমাদের অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা উচিৎ। পশ্চিমাদের কু- সাংস্কৃতির দিক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। মুক্ত রাখতে হবে নিজের ভাই-বোন ও সন্তানদের। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ প্রাঙ্গনে পা রাখার সময় খেয়াল রাখতে হবে। এমন কি ইউনিভার্সিটি পড়ানোর সময়ও খেয়াল রাখতে হবে ছেলে ছেলে বন্ধু বা মেয়ে মেয়ে বন্ধু বেঁচে নিয়েছে কি না? সমাজকে বাঁচাতে অভিবাবকগণকে ভুমিকা রাখতে হবে তাহলে মুক্ত হবে কলঙ্ক। বাঁচবে আপনার সমাজ আপনার ধর্ম।

লেখক – কলামিস্ট, সম্পাদক ও সাহিত্যিক

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P