এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন একদিন তারই নির্দেশে ধ্বংস হবে সবকিছু। যার শুরু আছে , তার শেষও আছে। অনুরূপভাবে একজন ব্যক্তি যদি চাকুরীতে যোগ দেন তবেএকদিন তাকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। আর চাকুরী থেকে বিদায় নেওয়াকে বলা হয় অবসর।
চাকুরী থাকাবস্থার তুলনায় অবসর জীবনের পার্থক্য হলো চাকুরীজীবনে মানুষ একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা বেষ্টিত কাঠা মোর মধ্যে অবস্থানকরে, যা তাকে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ রাখে; নানাভাবে সুরক্ষা দেয় ও সুবিধাও পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। উল্লেখ করার মত হলো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়, যে সাপোর্ট প্রতিক্ষেত্রে অনেকটা স্বাভাবিক ও আরামদায়ক জীবন যাপনে আশানুরূপ ভূমিকা রাখে। আর চাকুরী যদি পদস্থ পর্যায়ের হয়, তাহলে তা হয় সোনায় সোহাগা। আরাম আয়েশের সব ধরনেরসুবিধা যেনতাকে হাতছানি দেয় তখন।
তবে অবসরে আসার পর এসব সুবিধা থাকেনা। কেননা মানুষ যখন তার নিজ অবস্থানে থাকে তখন যেভাবে মূল্যায়িত হয়, পরবর্তীতে তা আর থাকেনা। অবসরে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। অবসর প্রাপ্তদেরনিজ প্রয়োজনে ও নিজস্ব প্রচেষ্টায় সবকিছু সংগ্রহ করতে হয়। যে কাজগুলো অবসরে আসা মানুষটির জন্য অনেক কষ্ট সাধ্য। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাই তার লেখা গানে উল্লেখকরেছেন, “চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।” চাকুরীরত এবংঅবসর জীবনের পার্থক্য তাই ব্যাপক বলে মনে হয়। বলতে গেলে অধিকাংশ অবসর ভোগী এ অবস্থা বাস্তবে উপলব্ধি করে থাকেন। অবসরের আগে যা বুঝে উঠা অত্যন্ত কঠিন। সময়ই বদলায় অবস্থান, ক্ষমতা বা বুদ্ধি মত্তার উপর অতিরিক্ত আস্থাবান হওয়া ঠিক না। চিরস্থায়ী বলে কিছুই নেই পৃথিবেীতে। “কেউ থাকবে না চিরদিন যেখানে তার অবস্থান ছিল, নিজেই জানবে না সে কেন সরে গেল।”এ কথাগুলো বলেছেন অনুপজালোটা।
এ গেল অবসরের পূর্বের কথা, কিন্তু অবসেরর পরের চিত্র ভিন্ন।অবসরের পূর্ব মুহুর্ত গুলোকে সহকর্মীরা কথার ছলে নানাভাবে ক্ষণে-ক্ষণে স্মরণ করিয়ে দেয়।অনেক সহকর্মী বন্ধু প্রকাশ্যে জানিয়ে দেয়, ভাই আপনার সময়তো ঘনিয়ে এসেছে। একান্ত সহকর্মীকে একথাগুলো দীর্ঘ দিনেরচাকুৃরীর শেষ পর্বে অবসরের বিষয়টিকে অবসর গ্রহনের দ্বার প্রান্তে আসা মানুষটিরঅবচেতন মনে অনেক কষ্টবয়ে আনে।মূলতঃ অবসরের বিষয়টি চাকুরীরত অবস্থায় কখনই মনেপ্রাণে অনুধাবন করা যায় না, যতক্ষন পর্যন্ত না অবসর ঘনিয়ে আসে। তখন মনে হয় কাছে, অতি কাছে কোথায় যেন বিদায়ের সুরধ্বণীত হচ্ছে। এবুঝি তাকে দীর্ঘদিনের চিরচেনা কর্মস্থল ও পরিচিতজনদেরনিকট থেকে বিদায়নিতেহচ্ছে। এ সময় চিরচেনা সহকর্মীদেরকে আর আগের মত মনে হয় না।তখন মনে হয়, এ সহকর্মীরা যেন তার কাছ থেকে দুরে-বহুদুরে সরে যাচ্ছে। কেউ যেন তাকে আর তখন আগের মত ভাল বাসছেনা। যেন সবাই মিলে তাকে অবাঞ্চিত বলে মনে করছে।এসব ভেবে অবসরের দিন ঐ কর্মচারী বেচারা অসহায়ের মত ধীরে ধীরে চিরচেনা কর্মস্থল ত্যাগ করে আবার ব্যক্তি জীবনে প্রবেশ করতে আস্তে আস্তে প্রস্থানকরতে থাকে।অশ্রু বর্ষণ করে বিদায় নিতে হয় চিরচেনা সহকর্মীদেরকাছ থেকে।তখন তারএকটি মাত্র ভাবনা অবসর জীবন যাপনের জন্য সব কিছু তাকে গুছিয়ে নিতে হবে নিজ উদ্যোগে, এ প্রস্তুতি তাকে মগ্ন রাখে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যত সহজে লেখা হলো এর বাস্তবতা তত সহজ নয়। অবসর পরবর্তী আর্থিক প্রস্তুতির জন্য যে অর্থ সম্পদের দরকার হয়, তা কিন্ত আশানুরূপভাবে অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী পান না। যদি সংসারে অভাব থাকে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া সন্তান-সন্তুতি থাকে সে অবস্থায় অবসরে আসা মানুষ মটির মাথা আর ঠিক থাকে না। চাকুরীরত অবস্থায়প্রাপ্ত বেতন দ্বারা যার সংসার চলত না, অভাব-অনটন যেখানে লেগেই থাকতো, সামান্য অবসর ভাতা দিয়ে সে সংসার স্বাচ্ছন্দে চালানো কিভাবে সম্ভব। নানান চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় অবসর ভোগী বেচারার মাথা ঘুর পাক খেতে থাকে সে অবস্থায়। কথায়বলে পেনশনারের জীবন টেনশনে যায়।যা পেনশন ধারীই ভালভাবে উপলব্ধি করেন। এছাড়াও বয়স নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করে এ সময়। স্বাস্থ্য সমস্যাও অনেক সময় কাবু করে ফেলে এবং এ কারণেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আরও অনেক বিপদ আপদ রয়েছে যা অবসর কালীন সময়ে আপনা-আপনি চলে আসে। কারনে-অকার নেমন মানসিকতা ভাল থাকেনা এসময়। কর্মাবসান হওয়ার কারনে অনেকেরই আর্থিক সংকট প্রকটভাবে দেখা দেয়। সংসারে যদি কর্মক্ষম বা উপার্জনকারী আর কেউ না থাকে, তাহলে অবসর গ্রহনকারীর জীবন দূর্বিসহ থেকে আরও দূর্বিসহ হয়ে উঠে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, অবসরের সময় অবসরভোগী যে, আনুতোষিকের টাকা পান,অবসর ভোগী তা দিয়ে কি করেন? আনুতোষিকের টাকা দ্বারা অনেকের পক্ষেই সৃজনশীল কিছু করা সম্ভব হয় না। কেননা এটা কার উপর সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যে রক্ষয়িষ্ণু দৃষ্টি থাকে অনেকের পরিবারে। সে কারণে এ টাকা দ্বারা বেশীর ভাগ অবসর ভোগীর পক্ষে ভাল কিছু করা কিংবা বাকী জীবন স্বাচ্ছন্দে চলার মত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যারা পেরেছেন, তাদের কথা আলাদা, তবে যারা ব্যর্থ তাদেরপ রবর্তী জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে।
মহান সৃষ্টি কর্তার রহমতের আশা এবং প্রতিমাসে একমাত্র পেনশনের টাকার আশায় চাতক পাখীর মত বৃষ্টির জলের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আর কোন উপায় থাকেনা। অবশ্যম্ভাবী এ পরিস্থিতি উত্তরণে প্রহর গুনতে গুনতে এক সময় তাকে পরপারে পাড়ি জমাতে হয়।