জয়নাল আবেদীন হিরো,নীলফামারী জেলা ;বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ইয়ার্ডে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে পড়ে আছে ৩০০টিরও বেশি মালবাহী ওয়াগন। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ওয়াগন আমদানি করা হলেও পুরনো ওয়াগনগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে একেবারেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর ইয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ওয়াগন অচল অবস্থায় রয়েছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ৩২৯টি বিসি ধরনের ওয়াগন দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। প্রতিটির আমদানি মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় এগুলোর বডি, চাকা ও বেয়ারিংসহ নানা যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে গেছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, এসব ওয়াগন কারখানায় নিয়ে মেরামত করলে আবারও ব্যবহারের উপযোগী করা সম্ভব। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। কিন্তু প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিট সরবরাহ না থাকা এবং চাহিদা কম থাকার অজুহাতে ওয়াগনগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দপুর রেলওয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, অতি প্রয়োজনীয় ওই যন্ত্রাংশ না থাকায় দেড় যুগ ধরে বিসি ধরনের ওয়াগন মেরামত করা যাচ্ছে না। শুধু সান্তাহার জংশন ইয়ার্ডেই পড়ে আছে ৯০টি বিসি এবং ২৫টি বিসিএফজি বা হপার ওয়াগন। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ইয়ার্ড থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ৫০টি ওয়াগন এখানে আনা হয়েছে। একইভাবে পার্বতীপুর ওয়াগন ডিপোতে প্রায় ১২০টি ওয়াগন অচল অবস্থায় আছে।
পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, একটি ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর। কিন্তু পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। তাই বডি, চাকা, বেয়ারিংসহ বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করে আর চালানো সম্ভব নয়।
অন্যদিকে রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান মনে করেন, কাগজে-কলমে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও অনেক ওয়াগনের অবকাঠামো এখনও মেরামতের যোগ্য। যেমন মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলোকে জিওএইচ বা বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে চালানো হচ্ছে। একইভাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হলে ওয়াগনগুলোও আধুনিক রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একদিকে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে মালবাহী ওয়াগনের চাহিদা নেই, অন্যদিকে সম্প্রতি ভারত থেকে ৪২০টি নতুন ওয়াগন আমদানি করা হয়েছে। অথচ স্বল্পমূল্যের যন্ত্রাংশের অভাবে পুরনোগুলোকে অচল অবস্থায় ফেলে রাখা হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অচল ওয়াগনগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—মেরামত করে চালানো হবে, নাকি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হবে।