জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে মাধ্যমে পাচার হয়ে আসা প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২০ হাজার পিস টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নীলফামারী কার্যালয়ের একটি দল। এসময় মাদক ব্যবসায়ী এন্তাজুল ইসলাম (৩২) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। সে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া মুন্সিপাড়ার নুর ইসলামের পুত্র।
গতকাল বেলা ১১ টায় শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে এস এ পরিবহন পার্সেল অফিসের সামনে ওইসব নেশাজাতীয় ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নীলফামারী কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক এনামুল হক বাদী হয়ে মাদক আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় এন্তাজুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে নীলফামারী জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সৈয়দপুরে মাদকের বিশাল চালান উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নীলফামারী জেলা কার্যালয়ের সুত্র জানায়, গোপন সংবাদে তারা জানতে পারেন,চট্রগ্রাম থেকে এস এ পরিবহনে মাদকের বড় চালান আসছে। এমন সংবাদ পেয়ে সংস্থাটির সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল থেকে এস এ পরিবহন পার্সেল অফিসের আশেপাশে অবস্থান নেয়। পরে ওই পার্সেল অফিস থেকে মাদকের চালানের একটি প্লাস্টিকের বড় বস্তা নিয়ে একটি রিক্সাভ্যানে ওঠা মাত্রই সংস্থাটির সদস্যরা মাদক বহন করা এন্তাজুলকে আটক করে। পরে ওই বস্তায় কি রয়েছে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। এসময় ওই প্লাস্টিকের বস্তা খুলে দেখা যায় সেখানে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটের প্যাকেট। পরে থানায় নিয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে গনণা করে তারা দেখতে পায় ওই বস্তায় ২০০ প্যাকেট রয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে ১০০ টি করে ট্যাবলেট রয়েছে। এসের আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নীলফামারী কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার মো. শরিফ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, গ্রেফতার এন্তাজুল স্বীকারোক্তি দিয়েছে, সে নিজে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং তার বাড়িতে ওইসব ট্যালবেট সংরক্ষণ করা হতো। এছাড়া ওই ব্যবসায় তাঁর গড ফাদার রয়েছে বলে জানায় এন্তাজুল। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাদকের চালানটি ঢাকা থেকে বুকিং দেওয়া হয়েছিল। বুকিং মেমোতে যে মোবাইল নাম্বার দেওয়া রয়েছে, সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে এস এ পরিবহন পার্সেল সার্ভিসের সৈয়দপুর অফিসের ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের অফিস থেকে ওই মাদক উদ্ধার করা হয়নি। বরং নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে মালসহ এর বাহককে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত মাল চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী থেকে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি এই মাল কার নামে বুকিং হয়েছে এবং কে করেছে সে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, কুরিয়ার সার্ভিস গুলোতে একজন সাধারণ গ্রাহক কোন মালামাল বা ডকুমেন্ট বুকিং করতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারি মালামালের বস্তা বা প্যাকেট খুলে নিশ্চিত হয়ে বুকিং করে থাকেন। অথচ প্লাস্টিকের বস্তায় মাদকের বিশাল চালান কুরিয়ার সার্ভিসে সৈয়দপুরে এলো কিভাবে এমন প্রশ্ন রেখে স্থানীয়রা জানান, এ কারবারের সাথে কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনের যোগসাজশ রয়েছে। তাই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা দরকার।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে সৈয়দপুরে আনা হচ্ছে মাদকের চালান। প্রায়ই এমন চালান আসলেও অজ্ঞাত কারণে পার্সেল সার্ভিসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় এর সাথে জড়িত প্রকৃত মাদক কারবারিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে মাদকের ছড়াছড়ি বেড়েই চলেছে সৈয়দপুরে। এমন অভিযোগ সচেতনমহলের।