Monday, 10 March 2025, 05:42 PM

আত্মার খোরাক জোগায় বই পড়া

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বই হলো জ্ঞানের আধার।বই বড় বড় মনীষী,সাহিত্যকদের সাথে যোগাযোগের প্রধান বাহন।তাইতো জ্ঞানী গুণিরা বলেন-বই হলো মানব জীবনের প্রকৃত বন্ধু এবং সঙ্গী।ওমর খৈয়ামের ভাষায় “রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে/প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে/কিন্তু বই একটি অনন্ত যৌবনা/যদি তা তেমন বই হয়।”আপাতত দৃষ্টিতে বইকে জড় বস্তু মনে হলেও পাঠক যখন পড়েন তখন তা জীবিত হয়ে ওঠে।কারন এতে থাকে জীবনের কথা,ভাললাগার কথা,ভালবাসার কথা,ধর্মীয় কথা,জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা।জীবন ঘনিষ্ট সকল কথাই এতে বাঁধা থাকে।

 

এখন বই সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া বাতুলতা বৈ আর কিছু্ই না।কিন্তু বর্তমানে বই পড়ার প্রতি মানুষের অনিহা দেখা যাচ্ছে।আর যেসব বই পড়ছে তা হলো একাডেমিক বই।যা পড়ে ভালো একাডেমিক ফলাফল করছে।বিগত দুই দশক আগে ও এরূপ বিষয় লক্ষ্য করা যায়নি।কিন্তু এখন এমনটি কেন হচ্ছে?

অতিমাত্রায় মোবাইল,টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার কারনে ক্রমাগত আমরা বই পড়ার অভ্যাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি।বই পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ৯৭% মানুষই উত্তর দেয়-’বই পড়ার জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।” সত্যি বই পড়ার সময় আমরা পাই বা কোথায়? প্রযুক্তির কল্যানে আমরা এগিয়েছি বহুদূর বটে।প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের শিশুরা আজ গেম নির্ভ্র,তরুন-তরুনীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক,টুইটার,ইমো,ইউটিউব প্রভৃতি নির্ভ্র।আর নারীরা টেলিভিশন নির্ভ্র বিশেষ করে ভারতীয় চ্যানেলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।যার দরুন বই পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে।কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে আজিমপুরের পাঠাগারে পাঠক নেই,এ নিয়ে প্রতিবেদন করে।এ দূরাবস্থা শুধু এই একটি পাঠাগারের নয়,হাতে গোনা কয়েকটি পাঠাগার ছাড়া দেশের সব পাঠাগারেরই এই একই দশা।এই বিমুখতা আমাদের প্রজন্মকে মননশীল চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে মেধার অপব্যবহারের দিকে ধাবিত করছে।ফলে আজ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ৫ প্রাপ্তরা অনেকেই স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস ঠিকঠাক বলতে পারেনি।আমাদের জন্য এটা খুবই লজ্জার বিষয়।তাইতো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-”আমরা না পড়িয়া পন্ডিত/আমরা না লড়িয়া বীর/আমরা ভান করিয়া সভ্য/আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট/আমরা ভারি ভদ্র/ভারি বুদ্ধিমান।”

 

একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরা যাক।আমি যে ভবনে থাকি সেখানে আমরা আটটি পরিবার থাকি।আমরা সবাই শিক্ষিত পরিবার।সবগুলো পরিবার বই পড়াতো দুরের কথা দৈনিক পত্রিকা নেন মাত্র ২ টা পরিবার।সামান্য একটি পত্রিকা নিতে এত অনিহা কেন? প্রতি মাসে ২৫০-৩০০টাকা খরচ হবে এই ভয়ে কি দৈনিক পত্রিকা নেব না! মনে রাখতে হবে পেটের ক্ষিধে মেটানোর জন্য যেমন প্রতিদিন কিছু না কিছু খেতে হয়,ঠিক তেমনি আত্নার খোরাক মেটানোর জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্থ্ ও সময় ব্যয় করতে হয় বই,পত্র পত্রিকা পড়ার পিছনে।এতে কেউ আমরা গরীব হবো না,সত্যিই গরীব হবো না।আমরা জীবনের অনেকটা সময় চেটিং,ডেটিং করে কাটাই।আমাদের তরুন প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে শুধু চ্যাটিং,ডেটিং,হাই,হ্যালো,সরি বেবি,জানু দিয়ে জীবন সুন্দর হয়না।এই সময়টাকে আমরা বই পড়ার মাধ্যমে কাটাতে পারি।আর তা না করে চ্যাটিং,ডেটিং করলে জীবনের আকাশে যে ঘন কালো মেঘ জমা হচ্ছে তার সুবহে সাদিক হওয়া প্রায় অসম্ভব।

 

তবে আশার কথা হলো এখনো বই পড়ুয়া বিলীন হয়ে যায়নি।তাই আমাদের দেশি এগিয়ে যাচ্ছে।তরুন প্রজন্ম সুনাম সুখ্যাতি ছড়াচ্ছে দেশে-বিদেশে।এখন ও নতুন নতুন লেখক তৈরি হচ্ছে।বই হলো জীবনের নতুন আকাশ।আমি,তুমি,আমরা মিলে এগিয়ে যাবো অনেক দূরে।তাই আসুন সবাই মিলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।দেশ ও জাতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে মানবিকতা ও মননশীল চেতনার উজ্জীবরে বই পড়ায় মনোযোগী হয়ে বইকে ভালো বন্ধু হিসেবে সঙ্গী করতে উদ্যেগী হওয়া এখন সময়ের দাবি।

লেখক-শিক্ষার্থী,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ্, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P