হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। কারণ দেশে যখন তখন, যেখানে সেখানে মিছিল, সমাবেশ ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। ছাত্র ধর্মঘট, মিছিল চলছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে। এতে মাঝে মাঝেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীনরা দেশে একেবারে চলে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও আইসের ভয়ে দিশেহারা নথিপত্রহীনরা। যেকোনো সময় ধরা পড়তে পারেন- এই আশঙ্কায় ঘর থেকে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। অনেকেই কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে আছেন। ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেবে, সেই ভয় আছে। অনেকেরই দেশের ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা এ দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কোথায় যাবেন? কেউ কেউ ভাবছেন, ট্রাম্প শাসনামলের চার বছর দেশে গিয়ে থাকবেন। পরে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু দেশে গিয়ে কী করবেন- এই চিন্তায় অনেকেই দেশে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ বাংলাদেশের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার কারণেও বিপাকে পড়েছেন। অনেকে কেস আপডেট করছেন। কেসের হিস্ট্রি বদল করার কথাও ভাবছেন।
বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার শঙ্কা নেই। কেউ তাদেরকে বিরক্ত করছে না। যদিও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীদের ভয়ের কারণ নেই।
এদিকে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মী বিগত সরকারের আমলে ১৬-১৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনে অনেকেই নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা এখন আর এসব দাবি বা অভিযোগ করতে পারবেন না। ফলে যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত, তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করে থাকলে সুবিধা নাও পেতে পারেন বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ এ দেশের বিচারকেরাও জানেন, বাংলাদেশে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বদলালেও সবাই নিরাপদ নন।
সূত্র আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কেবল যেসব আবেদনকারীর আবেদন পেন্ডিং রয়েছে, তারা নির্ভয়ে থাকতে পারবেন, তাদের কোনো সমস্যা হবে না- এমন কথা অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই নিরাপদ নন। কারণ স্ট্যাটাস আছে, এরপরও অ্যারেস্ট হয়েছেন, এমন ঘটনাও শোনা যাচ্ছে। অবশ্য স্ট্যাটাস থাকার পরও যারা ধরা পড়ছেন, তারা আইন অমান্য করছেন অথবা আইনভঙ্গ করেছেন। এমনও হয়েছে যে, তারা অপরাধ করেছেন। ফলে স্ট্যাটাস থাকলেও যারা গ্রিনকার্ডধারী কিংবা সিটিজেন, তারা ছাড়া অন্য সবাই ভয় পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে একজন অ্যাটর্নি বলেন, এখন যে যেই অবস্থায় আছেন, সাবধানে থাকুন। কেস পেন্ডিং থাকলে সতর্ক থাকুন।