বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের পর ভারতের নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশটির সংসদে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের তথাকথিত অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই সঙ্গে লাগাতার অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। এবার দেশটির উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলো।
হিন্দু নির্যাতনের তথাকথিত অভিযোগ এনে সম্প্রতি মুম্বাই, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, পিটিশন জমা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে কলকাতায় পিটিশন দেওয়ার সময়ে বাংলাদেশ মিশনের সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছে যায় এসব উগ্রবাদীরা। সবশেষ সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রায় দেড়শো উগ্রবাদী হিন্দু ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারি মিশনে পিটিশন দেওয়ার নামে ভেতরে ঢুকে জাতীয় পতাকা ছেঁড়াসহ সেখানে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ভেতরে ঢোকার পরই আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে টাঙানো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ধারণ করে সেখানে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরা এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশি সহকারী হাই কমিশনের এক কর্মকর্তার বিবিসিকে জানান, ওরা ভেতরে ঢোকার পরই পতাকা টানানো স্ট্যান্ডটি ভেঙে ফেললো। এরপর সেখান থেকে পতাকা নামিয়ে মিশনের ভেতরই পতাকাটা ছেঁড়ে। তাদের পতাকা ছেঁড়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করলে তারা পতাকাটি নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারত সরকারের যে ঘনিষ্ঠতা ছিল গত ৫ আগস্ট তা ভিন্ন রূপ নিয়েছে। ভারতের সরকার, মিডিয়া, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এর দুটি কারণ হতে পারে। একটি শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বত্র সহায়তা দেওয়ার পরও ক্ষমতায় রাখা সম্ভব হয়নি, যা ভারতীয়দের ইগোতে আঘাত করেছে। অন্যটি, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। সেখানে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানো হলে ভারতীয় রাজনীতিতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।
আরেকজন কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্যটি করেছেন সেটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে মাথায় রেখে। বাংলাদেশের হিন্দুদের পক্ষে কথা বলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মন জয় করতে চাচ্ছেন।
ভারতে বাংলাদেশের দিল্লি দূতাবাস ছাড়াও ত্রিপুরা, আসাম, মুম্বাই ও চেন্নাইতে উপ ও সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি মিশনের মধ্যে তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক আরেক কূটনীতিক বলেন, দক্ষিণে বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদের প্রভাব কম থাকায় চেন্নাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে পিটিশন দাখিলের সম্ভাবনা খুব কম। তবে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। কারণ উগ্রবাদীদের বিষয়ে মন্তব্য করা মুশকিল।
কূটনীতিকরা মনে করেন, সম্প্রতি চলমান বিষয়গুলো ঢাকা-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এর ফলে দুপক্ষেরই ক্ষতি হচ্ছে। অপপ্রচার চলতে থাকলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না। ভারতীয়রা যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝবে– আঞ্চলিক শান্তির জন্য সেটি ভালো হবে।
RT/N