গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বাংলার ইতিহাসে এমন কোন ছাত্র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন নেই, যেখানে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালি ইতিহাসের রাখাল রাজা। বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততা ছিলনা। হায় আমাদের পোড়া কপাল তিনি নেই।
আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি হল আন্দোলনে এসে একাত্বতা ঘোষণা করতো। তিনি নিজে এসে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতো। আজ বঙ্গবন্ধু নেই বলেই কি আমাদের এই দুর্দশা? তিনি থাকলে উপলব্ধিরর করতে পারতেন হল ছাড়া একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদদের জীবন কতটা বিভীষিকাময় হতে পারে?
তবে আমরা এখনো আশাহত নই। আজ হয়তো বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তারই যোগ্য উত্তরসূরি গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আছেন। আপনি তোক তারই কন্যা। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক। হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রী আপনি। আমরা তো আপনারই সন্তান। আপনি চাইলে আপনার সন্তানরা একটু মাথা গোজার ঠাই পাবে। আমরা বিশ্বাস করি সন্তানদের রাস্তায় রেখে মা কখনো একাঘরে ঘুমাতো পারেনা। আপনি পারবেন না? সন্তানদের কষ্ঠতো "মা" ই বুঝেন। মা ছাড়া আর কে বুঝবেন বলেন? আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান একমাত্র আপনিই করতে পারেন। হ্যাঁ জননী আপনিই পারবেন।
আপনি শুনে বিস্মিত হবেন যে, বর্তমানে দেশে ৩৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যার কোন আবাসিক হল নেই। দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হল আছে এমন কি ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, কবি নজরুল কলেজে, ইডেন কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে আবাসিক হল আছে তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন থাকবে না?
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি জাতি গঠনে কোন অবদান রাখছে না? এদেশের শিক্ষা ও অর্থনীতিতে তাদের কি কোন ভূমিকা নেই? তাদের কি সরকারের কাছে কিঞ্চিত সুবিধা পাওয়ার অধিকার নেই?
তৎকালীন কলেজ আমলে ১৩ টি হল থাকলেও তা বর্তমানে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। মাথা গোজার মত একটি ছাত্রী হলও নেই।
২০০৫ সালে ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে এক বিল পাসের মধ্যমে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে কিন্তু এর সকল কার্যক্রম মূলত মহাজোট সরকারের আমলেই হয় । প্রতিষ্ঠার একযুগ পেরিয়ে গেলেও ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি কোন আবাসিক হল।
২০১১ সালে সরকারী অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই বাংলাবাজারে লিয়াকত আলী এভিনিউ এ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামের ১৬ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিল শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৬ বছরে একতলার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ফলে আবাসিক হলের জন্য প্রায় উত্তাল হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। যেমন টি হয়েছিল ২০১৪ সালে হল আন্দোলন। অনেক রক্ত ঝরেছিল রাজপথে এক ছাত্র
তার চোখ হারিয়েছিল পুলিশের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের নাসির উদ্দিনের স্যারের মত অনেক শিক্ষকের দেহ। কিন্তু হল উদ্বার সম্বভ হয়নি নতুন হল ও নির্মান করা হয়নি। প্রশাসন বরারই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছে। রাজধানীতে জমি সংকটের জন্য হল নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে আপনার নিকট সদ্য সাবেক কারাগারের জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ৮ ই আগস্ট ২০১৬ তারিখে আবেদন করা হয়েছে । যদি জবি প্রশাসন কারাগারের জমি পাওয়া যায় তাহলে সেখানে বঙ্গবন্ধু নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র, চার নেতার নামে চারটি হল, একটি জাদুঘর এবং একটি অডিটোরিয়াম করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়। তবে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি সরকারের পক্ষ থেকে।
মাতৃতুল্য প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিথ্যা আশ্বাস আর কেউ শুনতে রাজি নয়। আমাদের হল সংকট সমাধানে আপনার হস্তক্ষেপ চাই। সদ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত করায় জায়গা টি মুক্ত হয়। এটাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরর জন্য হল নির্মাণেরর উত্তম জায়গা। জননী আজ প্রায় ১ মাস যাবৎ হলের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার নামে চারটি হল একটি জাদুঘর ও একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ( জবির) নিকট হস্তান্তর করা হোক।
১৯৭৫ সালে ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা ১. তাজউদ্দীন আহম্মেদ ২. কামরুজ্জামান ৩. মনসুর আলী ৪. সৈয়দ নজরুল ইসলাম। চার নেতার মধ্য বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ( জবির)সাবেক ছাত্র। সে হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনসহ চার নেতার স্মৃতি রক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এই জমি যোগ্য দাবিদার।
প্রধানমন্ত্রী এটি সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ, ১৯২৪ সালে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বক্তৃতার মাধ্যমে পূর্ববাংলা সফর করেন।
এটি সেই বিশ্ববিদ্যালয় যার রক্তের সাথে মিশে আছে ৫২ ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন এর রক্ত। ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা, ৬৯ গণ অভ্যুত্থান, ৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্বের ইতিহাস। এমন কি বঙ্গবন্ধু বিরুদ্ধে আগরতলার মিথ্যা মামলার ও প্রথম প্রতিবাদ করেছিল তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্ররা।
জগন্নাথের সাবেক ছাত্র রফিকউদ্দিন, তাজউদ্দীন, জহির রায়হান, ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, মুনীর চোধুরী, যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান, বীরবিক্রম মোফাজ্জল হোসেন মায়া(ত্রান মন্ত্রী) , কাজী ফিরোজ( সাংসদ) রশিদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, কবি সৈয়দ সামছুল হক, প্রেমেন্দ্র মিত্রসহ শত ব্যক্তি।
প্রধানমন্ত্রী আমরা আশাকরি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি আপনি নিজে এসে প্রতিষ্ঠা করে যাবেন। সন্তানের দাবি থেকে বলছি।
লেখক-
রবিউল সুমন
শিক্ষার্থী,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।