Thursday, 13 March 2025, 01:33 AM

চার্লি চ্যাপলিন : দরিদ্র বালক থেকে খ্যাতির চূড়ায়

বিনোদন ডেস্কঃ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে অভিনেতা সম্পর্কে ‘আইকনিক’ বিশেষণটি প্রয়োগ করা যায়, তিনি হলেন চার্লি চ্যাপলিন – গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন যার ‘ফ্যান’ ছিলেন। চ্যাপলিনের ‘ট্র্যাম্প’ বা ভবঘুরে চরিত্রটি আজও সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।


হরিষে বিষাদ

কালো মোচ, কালো টুপি, হাতে বেত, পায়ে অতি পুরনো বুটজুতো আর পাতিহাঁসের মতো চলন – দেখলেই মানুষজন বুঝবেন, হয় চ্যাপলিন, নয়তো চ্যাপলিনের নকল। চ্যাপলিন তাঁর ট্র্যাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রে প্রথম আবির্ভূত হন ১৯২১ সালে, ‘দ্য কিড’ ছবিতে। হাসিঠাট্টা আর বিষণ্ণতা, ভাঁড়ামো আর হতাশা মিলে এক অদ্ভুত রস সৃষ্টি হয়েছে এই অদ্ভুত চরিত্রটিতে।


প্রথমে দারিদ্র্য, পরে খ্যাতি ও বিত্ত

চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিনের জন্ম ১৮৮৯ সালে, খুব সম্ভবত লন্ডনে। তিনি পরলোকগমন করেন ১৯৭৭ সালে, সুইজারল্যান্ডে। দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম ও শৈশব, কাজেই চ্যাপলিন জানতেন, দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার আশা ও স্বপ্ন। এর হাস্যকর দিকটা আবার ফুটে উঠেছে তাঁর ‘গোল্ড রাশ’-এর মতো ছবিতে (১৯২৫): একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে ঐশ্বর্য – ও সুখাদ্যের – স্বপ্ন।


নির্বাক থেকে সবাক

চ্যাপলিনের বহু ছবি নির্বাক ছায়াছবির যুগের। সাইলেন্ট ফিল্ম থেকে ‘টকিজ’-এ তাঁর উত্তরণ ১৯৩১ সালে, ‘সিটি লাইটস’ ছবিটিতে। তবে সবাক ছবি চ্যাপলিনের কোনোদিনই বিশেষ ভালো লাগেনি। তাই তিনি নির্বাক ছবি তৈরি চালিয়ে যান, আবার প্রয়োজনে সংলাপও ব্যবহার করেছেন। তবে তাঁর পেটোয়া ছিল তাঁর চোখমুখের অভিব্যক্তি, তাঁর হাঁটাচলা, যা পূর্বাপর চ্যাপলিনের ট্রেডমার্ক থেকে যায়।


চার বার বিয়ে

মহিলাদের হৃদয় জয় করতে চ্যাপলিনের জুড়ি ছিল না। কিন্তু তাঁর নিজের পছন্দ ছিল তাঁর চেয়ে অনেক কম বয়সের মহিলাদের – যা নিয়ে কেলেংকারিও কম হয়নি, দুর্নাম হয়েছে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, তেমনই চ্যাপলিনের স্বদেশ ইংল্যান্ডে। ছবিতে চ্যাপলিনের দ্বিতীয় স্ত্রী, টিনেজ অভিনেত্রী লিটা গ্রে চ্যাপলিনকে উভয়ের দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, ১৯৩১ সালে।


সমাজদর্পণ

সিনেমায় চ্যাপলিন যে চরিত্রগুলিতে অভিনয় করেছিলেন, আধুনিক পরিভাষায় তাদের বলে ‘আন্ডারডগ’ বা নীচের তলার মানুষ, নিজের বুদ্ধি ও চাতুর্যের উপর নির্ভর করে যাদের জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। ‘আন্ডারডগ’ বলতে কিন্তু ‘লুজার’ বা হেরো বোঝায় না। হেরোকেই হিরো করে তুলেছিলেন চ্যাপলিন। আবার ‘মডার্ন টাইমস’-এর মতো ছবিতে (১৯৩৬) ফুটে উঠেছে ‘আধুনিক’ যন্ত্রসভ্যতা ও তার হৃদয়হীনতা সম্পর্কে চ্যাপলিনের সমালোচনা।


হিটলার ক্ষমতায় থাকতে হিটলারকে নিয়ে ছবি!

১৯৪০ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’, যে ছবিতে হিটলার ও নাৎসিদের খোলাখুলি ব্যঙ্গ করেছেন চ্যাপলিন। খোদ হিটলার নাকি ছবিটি একাধিকবার দেখেছিলেন। চ্যাপলিন অবশ্য পরে বলেছেন, নাৎসি বন্দিশিবিরের বিভীষিকার কথা জানা থাকলে তিনি ছবিটি করতে পারতেন না।


পাদপ্রদীপের আলোয়

‘লাইমলাইট’ ছবিটি প্রথম মুক্তি পায় লন্ডনে, ১৯৫২ সালে। এর স্বল্প আগে চ্যাপলিনের মার্কিন মুলুকে আসা নিষিদ্ধ হয়েছিল, তিনি কমিউনিস্ট ও ভ্রষ্টাচারি সন্দেহে – যুক্তরাষ্ট্র্রে তথাকথিত ‘ম্যাককার্থি আমলে’ যা বহু বুদ্ধিজীবীর কপালে জুটেছিল। ‘লাইমলাইট’ ছবিতে চ্যাপলিন মঞ্চাভিনেতা হিসেবে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু নিয়েছেন।


শেষ ছবিটিই ফ্লপ

চ্যাপলিন দশ বছর ধরে কোনো ছবি না করার পর, ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’ ছবিটি। মার্লন ব্র্যান্ডো ও সোফিয়া লোরেনের মতো তারকারা থাকা সত্ত্বেও ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ করে। চ্যাপলিন তাঁর জীবনের শেষ দশকগুলি কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ডে – এই সময়ে শুধুমাত্র একবার যুক্তরাষ্ট্র্রে ফিরেছিলেন তিনি, ১৯৭২ সালে, একটি সাম্মানিক অস্কার গ্রহণ করার জন্য।


চার্লি চ্যাপলিন অমর রহে!

ঠিক চ্যাপলিন নয়, তবে তাঁর সৃষ্ট সেই ট্র্যাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি বোধহয় বিজ্ঞাপনের জগতের প্রথম বেওয়ারিশ কিন্তু বিশ্বায়িত প্রতীক: কাজেই সব রকমের পণ্য বা বিজ্ঞাপনে চ্যাপলিনের মুখ দেখে অভ্যস্ত আমরা। কস্টিউম বল বা কার্নিভালে চ্যাপলিন সাজেন অনেকে – সার্কাসের ভাঁড়দের মধ্যে চ্যাপলিনের ছোঁয়া আজও সর্বত্র।


কিংবদন্তি

কিংবদন্তির নায়ক, আবার নিজেই কিংবদন্তি বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে অনধিকার প্রবেশ করে শেষমেষ সেই ইতিহাস জুড়ে থাকা এই মানুষটি – নিজের স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা অতিক্রম করে কবে মহাকালের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন। চ্যাপলিন বিশেষজ্ঞ লিজা স্টাইন হাফেন যেমন বলেছেন, চ্যাপলিন হলিউডের তারকা ছিলেন না, কারণ হলিউড তখন সৃষ্টিই হয়নি।’


K/K/N.


// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P