Friday, 05 December 2025, 11:09 AM

চবিতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট : উচ্চশিক্ষার নতুন দিগন্ত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার জন্য চীন সরকারের এডুকেশন ফাউন্ডেশন, ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চূড়ান্তভাবে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। 

ইনস্টিটিউটটি চালু হলে চাইনিজ ভাষা শিক্ষা, যৌথ গবেষণা, উচ্চশিক্ষায় বিনিময় কার্যক্রম এবং দুই দেশের ভাষা-সংস্কৃতির আদান-প্রদানের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ১৫ নভেম্বর চীনের বেইজিংয়ে ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে। চীনের এডুকেশন ফাউন্ডেশনের পক্ষে ফাউন্ডেশন প্রধান এবং ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. ওয়াং ঝিলিয়াং ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। এখানে চাইনিজ ভাষা ও সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখানো হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চীনকে আধা একর জমি দিবে, চীন সরকারের অর্থায়নে ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণি কক্ষে অস্থায়ীভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তীতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট অবকাঠামোগত রূপ ধারণ করলে সেখানে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরু হবে।

চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পুরো প্রক্রিয়ার অর্থায়ন করবে চীন সরকার ও ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়। তবে, আয়ের অর্ধেক জমা হবে চবির কোষাগারে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যয় হবে। আগামী অক্টোবরের আগেই চবিতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট তার পুরো কার্যক্রম শুরু করবে। এরই মধ্যে তাদের একটা টিম চবিতে আসবে। অ্যাকাডেমিক ব্লক, প্রশাসনিক ভবন ও ডরমিটরি তৈরির বিষয়ে পরিকল্পনা সাজাবেন।

তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট পরিচালনায় বাংলাদেশ ও চীনের দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয়জন করে মোট ১২ সদস্যের বোর্ড অব ডিরেক্টরস গঠন করা হবে। সেখানে বোর্ড প্রধান হিসেবে থাকবেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। প্রতিবছর অন্তত একটি ফিজিক্যাল বা অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, অগ্রগতি ও সফলতা বিষয়ে মূল্যায়ন ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে।

চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নতুন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও এই নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরটি হবে সেগুলোর তুলনায় ভিন্ন। ঢাবিতে শুধু চাইনিজ ভাষা শেখানো হয়, সেখানে চবিতে চাইনিজ ভাষার পাশাপাশি চীন থেকে আগত শিক্ষার্থী, গবেষক ও কর্মজীবীদের বাংলা ভাষাও শেখানো হবে। ফলে এটি হবে একটি দ্বিভাষিক বা ‘বাইল্যাঙ্গুয়াল’ ইনস্টিটিউট।

তিনি বলেন, চবির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে তিনটি মূল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ১. ভাষা শিক্ষা: বাংলাদেশিরা চাইনিজ ভাষা শিখবে, চীনা নাগরিকরা শিখবে বাংলা ভাষা। ২. যৌথ গবেষণা: উভয় দেশের শিক্ষকরা একে অপরের দেশে গবেষণায় অংশ নেবেন। ৩. উচ্চশিক্ষা বিনিময়: চবির শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে চীনে যেতে পারবেন, আর চীনা শিক্ষার্থীরা চবির মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়তে আসবেন। এক্ষেত্রে এসবের পুরো অর্থায়ন করবে চীন সরকার ও ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়।

কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার এই ত্রি-পক্ষীয় চুক্তিকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে চবি শিক্ষার্থীরা চাইনিজ ভাষা শিখতে পারবে। পাশাপাশি চীনা নাগরিকরাও বাংলা ভাষা শিখতে পারবে। এতে চীনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলাবোরেটিভ রিসার্চ, বিনা খরচে সহজেই স্কলারশিপ এবং আন্তর্জাতিক জব মার্কেটে ভালো করতে সক্ষম হবে।

উপাচার্য বলেন, ‘কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপারেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে নানাবিধ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া আমরা যদি চবিতে বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে। আমরা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়েও এগিয়ে যাবো।’

প্রাথমিকভাবে ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীন এ বছরই একজন শিক্ষার্থীকে চবিতে বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স এবং একজনকে পিএইচডি প্রোগ্রামে পাঠাতে চাচ্ছে বলে জানান তিনি।

bssn

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P