মোমিন ইসলাম সরকার দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের মৌমারী এলাকায় লাইসেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রবিহীন দুটি ইটভাটা বন্ধ করার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই পুনরায় চালু হয়ে গেছে। গত ৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হাসান ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুব আলীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ‘কে এস বি ব্রিকস’ ও ‘এম এস ব্রিকস’ নামক ইটভাটাদ্বয়ের চুল্লির আগুন নিভিয়ে ভাটা দুটি গুঁড়িয়ে দেন।
তবে বিস্ময়করভাবে, মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ভাটাগুলো আবারও চালু হয়ে যায়। আজ ৭ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত দুইটি ইটভাটা সহ আশপাশের আরও কিছু ইটভাটায় আগের মতোই কাজ চলছে।
‘কে এস বি ব্রিকস’-এর ম্যানেজার হান্নান জানান, তারা উচ্চতর প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পরই ইটভাটা পুনরায় চালু করেছেন। তবে তিনি লিখিত কোনো অনুমতির বিষয়ে কিছু জানাননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, “কোনো অবৈধ ইটভাটা যদি পুনরায় চালু হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্চগড় জেলায় মোট অনুমোদিত ইটভাটার সংখ্যা ১২টি। কিন্তু বাস্তবে জেলায় ৩০টিরও বেশি ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে অন্তত ৫০% ই ভাটার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি অবৈধ ইটভাটা বছরে গড়ে ৫০-৬০ টন কার্বন নির্গমন করে, যা আশপাশের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। এছাড়া ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত শিশুদের মাঝে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা, ত্বকের সমস্যার হার প্রায় ৪০% বেশি।
“অনুমোদনহীন ইটভাটা শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ুতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস সরাসরি বাতাসকে দূষিত করে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাটার আশেপাশে শিশুদের খেলা করতে দেখা যাচ্ছে ধুলাবালি আর ধোঁয়ার মাঝে। মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা, যাদের মুখে মাস্ক কিংবা চোখে সুরক্ষা নেই। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আকাশে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাটার গেটের সামনে মাহিন্দ্র ট্রাকের দীর্ঘ সারি, প্রতিনিয়ত ইট পরিবহন করছে বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, “সরকারি অভিযান আমরা দেখেছি, কিন্তু কয়েকদিন পর আবার আগের মতো সব চলছে। তাহলে অভিযান কেন? এসব দেখে আমরা হতাশ।”
এলাকাবাসী দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, আর আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারাবে।”