গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ জনে।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে আরও ৩৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২৩ জনে।
রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও পরিচালক (এমআইএস) ডা. মো. হাবিবুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির নাম বিভ্রাটের কারণে ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহেদ মালেক মৃত্যু সংখ্যা ৪ জন বলে জানিয়েছিলেন। এই তথ্যটিও উনাকে আইইডিসিয়ার থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। সুতরাং এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহেদ মালেক আজ দুপুরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জনস্ (বিসিপিএস) এর সম্মেলন কক্ষে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে এক জরুরি সভায় করোনাভাইরাসে নতুন ২৯ আক্রান্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।
ব্রিফিংয়ে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১ জন ১ সপ্তাহ যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তার বয়স ৪৭ বছর। তার শ্বাসকষ্টের রোগ ছিল। অপর দুইজন হাসপাতালে আসার ওর পরই মারা গেছেন।
তিনি জানান, ‘গত ২৪ ঘন্টায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন এদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের ১১ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের ৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১৪টি ল্যাবে আরও ৪৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বমোট ৪ হাজার ১১টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করায় ১২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আর ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ জন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ৬৪ জন, নারায়ণগঞ্জের ২৬ জন, মাদারীপুরের ১১জন, চট্টগ্রামের ২ জন, গাইবান্ধার ৫ জন, ঢাকা জেলা (মহানগরের বাইরে) ৪ জন, জামালপুরে ৩ জন এবং চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, রংপুর, শরীয়তপুর ও সিলেটে ১ জন করে রয়েছেন।
ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৩০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ১১ হাজার ৩৩০ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় কাউকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। সবমিলিয়ে ৪৪৩ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হলেও তাদের মধ্যে বর্তমানে ১০৭ জন এখনো আইসোলেশনে রয়েছেন।
করোনা প্রতিরোধে দেশবাসীকে কোয়ারেন্টাইন বিধিমালা কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে প্রতিরোধে সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে সতর্ক থাকলে করোনা বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।’
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বিশ্বের ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৬২ হাজার ৭৮৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৬১ জন এবং মৃত্যুরণ করেছেন ৫ হাজার ৭৯৮ জন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৮৮ জন এবং মত্যুবরণ করেছেন ৩৫ জন।
মহাপরিচালক জানান, স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ টি কল এসেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৬৭ হাজার ২১০টি কল এসেছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ২৬২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ১৪৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর-এর হটলাইনগুলোতে জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় ২৬৭ জন বিদেশ থেকে আগত যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।