Monday, 10 March 2025, 03:33 AM

ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাতে ঢাবিসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ঢাকাসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার রাতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন নারী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একজন কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তৌহিদী জনতা নাম দিয়ে একদল ব্যক্তি থানার সামনে অবস্থান নিয়ে হট্টগোল করে। পরে বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তি আদালতে জামিন পান।


এ ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যেই মাগুরায় একটি শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। ওই শিশুর অবস্থা 'ক্রিটিক্যাল' বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীসহ সারাদেশে কয়েকটি ধর্ষণের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নারী, শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।  


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ও অবস্থান থেকে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে চব্বিশ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেটি না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি জানানো হয়েছে।


এমন প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও নারী নির্যাতনের সাথে জড়িত নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে মধ্যরাতে হল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রীরা। পরে তাদের সাথে কয়েকটি হলের ছাত্ররাও যোগ দেন।


এসব বিক্ষোভ, অবস্থান, সমাবেশ ও মিছিলের সময় ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন- ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই - ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত- ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’- শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসগুলো।


শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শুরুতে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ধর্ষক ও নিপীড়কদের শাস্তির দাবিতে শ্লোগান সংবলিত ব্যানার প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন।


মিছিলটি রোকেয়া হল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার হলের সামনে ফিরে আসে। পরে রাত বারটার কিছুক্ষণ আগে সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করলে অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও তাতে যোগ দেন।


শিক্ষার্থীরা এ সময় তাদের বক্তৃতায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবির জানান। পরে রাত প্রায় দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন- আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


ওদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ৯টার দিকে শামসুজ্জোহা চত্বরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা সরকারের উদ্দেশ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা বলেন ‘এটি করতে না পারলে দেশের শাসনভার চালানোর অধিকার আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন’।


ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী অনিশা দাশ বলেন, ‘প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর একটা ধর্ষণের খবর পাচ্ছি, ফেসবুক স্ক্রল করলেই ধর্ষণের খবর দেখছি। তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? সারা বাংলাদেশের মেয়েরা আজ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় বের হয়ে আসছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তার দাবি নিশ্চিত করতেই রাতে বিক্ষোভ করছি।’


অনিশা দাশ বলেন, ‘হল প্রভোস্টদের (প্রাধ্যক্ষ) বারবার আমরা কল দিচ্ছিলাম যেন আমাদেরকে বের হতে দেওয়া হয়। আমরা বলেছি আমাদের নিরাপত্তার জন্য বাইরে বের হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। প্রভোস্টরা অনুমতি না দেওয়াতে হলের তালা ভেঙে বের হয়েছি আমরা।’


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।শনিবার (৮ মার্চ) দিনগত রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ছাত্রীদের হলের সামনে দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান। এতে ১০ থেকে ১২টি হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আধাঘণ্টা বিক্ষোভ শেষে রাত তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা।


বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে জনগণ যে স্বপ্ন নিয়ে রক্ত দিয়েছিল, জীবন দিয়েছিল সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। সারাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি বেড়েই চলেছে। দেশে একের পর এক ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্তর্র্বতী সরকারকে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ধর্ষণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত না করা হয় তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আমরা ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করব।


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সারাদেশে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। মাগুরার ৮ বছরের শিশু আসিয়াসহ অসংখ্য ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের ঘটনার জেরে এ আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। 


রোববার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধর্ষকদের ফাঁসি, তাদের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত আড়াইটায় আবাসিক ছাত্রীহলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে আসেন।


এ সময় শিক্ষার্থীরা দউই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’, তোমার বোন আমার বোন, আসিয়া আসিয়া’, ‘ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে’ ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


ধর্ষণ প্রতিরোধে এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে নারীসহ জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।


শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উক্ত বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এর আগে, জোহা চত্বরে একত্রিত হন শিক্ষার্থীরা। এরপর পশ্চিমপাড়ায় মেয়েদের হলের সামনে দিয়ে ঘুরে পুনরায় জোহা চত্বরে মিলিত হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করেন। 


এ সময় তারা, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা জবাই কর’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এ বাংলায় হবে না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টারিম জবাব দে’, ‘ধর্ষকের শাস্তি, মৃত্যু মৃত্যু’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট একশন’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। 


সমাবেশে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ বলেন, ‘ধর্ষণের কারণে আমাদের বোন আসিয়া এখন মৃত্যুর পথযাত্রী। অনেক ধর্ষিতা বোন আছে, যারা তাদের কথা প্রকাশ করতে পারে না। তারা প্রত্যেকটা দিন তিলে তিলে মনের ভিতর কুঁকড়ে মরে যায়। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি যদি সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে না পারেন, তাহলে আপনি পদত্যাগ করে রাষ্ট্র জনগণের হাতে ছেড়ে দেন। জনগণ দেশ পরিচালনা করবে।’ 


RTV/N 

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P