Sunday, 11 May 2025, 03:23 PM

দিনাজপুর বিএডিসির দিকনির্দেশনায় এবার আলুর বাম্পার ফলন

মোঃ আব্দুল আজিম, দিনাজপুর: দিনাজপুরে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও দামে খুশি নয় কৃষক। চলতি বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন দিনাজপুর অঞ্চলের আলু বীজে বাম্পার ফলন হওয়ায় সন্তুষ্ট আলুচাষীরা। অপরদিকে কৃষকদের ঠকিয়ে আলু পাইকাররা স্বল্প মূল্যে জমি থেকে আলু ক্রয় করে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করছে কৃষকদের। 


হিমাগার থেকে বীজ আলু বের করার পর প্রয়োজনীয় প্রিকুলিং, ফ্যানিং ও গ্রেডিং বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষী পর্যায়ে সরবরাহ করা হয় বীজ আলু। বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি হবে। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করেন কৃষক। বীজের দাম সহনীয়, প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তাই কৃষকরা জমিতে জাতের আলু রোপণ করছেন। শ্রমিকরাও বসে না থেকে আলু ক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। মহিলারাও বিএডিসি আলু বীজ হিমাগারে ও ক্ষেতে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন। 


১৫ জানুয়ারী বুধবার বিকেলে কথা হয় বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের আলু চাষী কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিএডিসির উন্নত মানের আলু বীজ রোপন করে আমরা এবার স্বাবলম্বি হয়েছি। এবং বিএডিসির কর্মকর্তারা আমাদের মাঝে আলু রোপনের সঠিক নিয়ম ও সময় বলে দেয়ায় আমরা এবার আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছি। এবার আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানা প্রকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএনডিসি দিনাজপুর বীজ অঞ্চলের উপ-পরিচালক আব্দুল রশীদ। তবে ফলনে লাভবান হলেও দামে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে তবে বাজারে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি থাকতে হয়। এবার কৃষকদের কাছ থেকে ২২ থেকে ২৫ দরে আলু কিনেছে পাইকাররা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে কৃষক পরিবার। 


আলু চাষীরা জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিএনডিসির কর্মকর্তারা আলু চাষীদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করায় আলুর ক্ষেতে রোগ-বালাই দেখা যায়নি। ওইসব রোগ বলাই আলু ক্ষেত থেকে দূর হয়ে গেছে। আগাম জাতের আলুর ক্ষেতে বিশেষ করে লেদ- লেইট, ও বøাইট নামক বালাই রোগ ক্ষেতের ভাইরাস আক্রান্ত করে আলুর জমির পচন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। এবার আলুতে সেই রোগটি দেখা যায়নি। তাই আগামী মৌসুমে আগাম জাতের আলুর চাষ আরও বাড়বে বলে জানায়, আলু চাষীরা।

জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ রামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে ৫ জাতের আলু রোপণ করেছি। ১৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার বিকেলে আলু উঠার পর, ক্ষেত থেকে পাইকাররা ২৪ টাকা কেজি দরে ২৫ মণ আলু নিয়ে গেছে।


একই এলাকার কৃষক মো. খাদেমুল হক বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে আগাম ৭ টি জাতের আলু চাষ করছি। এবারে আলু চাষে ৪ বিঘা জমিতে সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। জমি থেকে গত ৭ দিনে আলু বিক্রি করেছি ৫ লাখ টাকার। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। আমি আলু ক্ষেত থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানায়, এবার দিনাজপুর জেলায় ৪৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এবার হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, গত ৩ দিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষীদের আলু উঠানোর পর অর্জিত ফলন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন কালে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, এবারে আগাম উন্নত ৭টি জাতের আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে ।


খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের আলুচাষী রোস্তম, মনিরুজ্জামান, গোলাম কিবরিয়া জানান, গেল বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে । এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে ভালো দাম পাব।


ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের আলু চাষী মোস্তাকিম বিল্লাহ ও নুরুল হক বলেন, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু মাঠ থেকে তোলা যায় বলে আমরা আলু চাষের আগ্রহী হয়েছি। আগে এ সময়টা কোন কাজ থাকতো না। এখন আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।


বিএডিসি দিনাজপুর বীজ অঞ্চলের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বীজ আলু রোপনের উত্তম সময়। গুণগত বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন বøক পরিদর্শনে গিয়ে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইসহ উৎপাদিত এই আলু বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব। বীজ আলু হিসেবে ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, সানসাইন, সান্তানা ও লেডিরোসেটা বেশি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সানসাইন ও সান্তানা আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P